একদিকে ইতিহাস মুছে ফেলার অভিযোগ, অন্যদিকে সেই ইতিহাসকেই নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ—মহাত্মা গান্ধীকে ঘিরে কেন্দ্র ও রাজ্যের টানাপোড়েন আরও স্পষ্ট হল। সংসদে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের নাম বদলের পর এবার বাংলায় রাজ্য সরকারের প্রকল্পের নতুন নামকরণ করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্পের নাম বদলে রাখা হল ‘মহাত্মাশ্রী’।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর প্রস্তাবে এই নামবদলে সিলমোহর দিয়েছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। শনিবার রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের তরফে এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এখন থেকে বাংলায় রাজ্য সরকারের ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের নাম হবে ‘মহাত্মাশ্রী’।
এই প্রকল্পের আওতায় আগে বছরে ৭৫ দিনের কাজ দেওয়া হতো। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার থেকে ১০০ দিনের কাজ মিলবে। যাঁদের বৈধ জবকার্ড রয়েছে, তাঁরাই ‘মহাত্মাশ্রী’ প্রকল্পের অধীনে কাজ পাবেন। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, আগামী অর্থবর্ষ থেকে এই প্রকল্পে আরও বেশি সংখ্যক দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করাই লক্ষ্য।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ ডিসেম্বর সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে দীর্ঘ তর্ক-বিতর্কের পর কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের কাজ সংক্রান্ত বিল পাশ করায়। তার ফলে MGNREGA বা মনরেগা প্রকল্পের নাম বদলে রাখা হয়েছে ‘ভিবি জি রাম জি’। এই নামবদলের মাধ্যমে একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প থেকে ‘জাতির পিতা’ মহাত্মা গান্ধী-র নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে—এই অভিযোগ তুলে সরব হয় বিরোধীরা।
তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ও বিধায়কেরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সংসদের সামনে রাতভর ধরনায় বসেন। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই তিনি ঘোষণা করেন, রাজ্যের ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্পের নাম বদলে মহাত্মা গান্ধীর নামানুসারেই নতুন নাম রাখা হবে।
রাজ্য সরকারের দাবি, ‘মহাত্মাশ্রী’ প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু কর্মসংস্থানই নয়, গান্ধীজির আদর্শ ও স্মৃতিকে সম্মান জানানোই এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এই নামবদল যে রাজনৈতিক ও প্রতীকী দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ, তা মানছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও।