Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$ID is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 46

Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$post is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 47
সেদিনও ছিল আগস্ট মাস - NewsOnly24

সেদিনও ছিল আগস্ট মাস

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

গাড়িতে পিছনের সিটে হেলান দিয়ে বসে আছেন সুচিত্রা। সাদা রঙের এ্যাম্বাসাডার গাড়ী। খুব গরম পড়েছে।বৃষ্টিও হচ্ছে।তবু একটা ভ্যাপসা গরম। পার্ক স্ট্রীট দিয়ে গাড়ী ঢুকে একটু এগোতেই পাশের ফুটপাতে একজনকে পথচারীদের কাছ থেকে ভিক্ষা করতে দেখেই সুচিত্রা সোজা হয়ে সিটে বসে ড্রাইভারকে গাড়ি সাইড করতে বললেন।গাড়ি থামলো। তিনি নিজে গাড়ি থেকে নেমে সোজা সেই মানুষটির কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন,হ্যাঁ,ঠিকইএই গরমে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করছেন স্বয়ং ঋত্বিক ঘটক।

হাত জোড় করে প্রণাম করতে করতে সুচিত্রা বললেনঃ”আমাকে চিনতে পারছেন ঋত্বিক দা?আমি সুচিত্রা,গত বছর শান্তিনিকেতনে দেখা হলো। “

চশমার ওপর দিয়ে তাকিয়ে ভালো করে মুখটা দেখতে লাগলেন ঋত্বিক,তারপর বললেনঃ”দাঁড়াও, দাঁড়াও,একটা বিড়ি ধরাই।” এই বলে বিড়ি ধরিয়ে একটা টান দিয়ে গলগল করে ধোঁয়া ছেড়ে,একগাল খোঁচা খোঁচা দাড়ি ভরা মুখে একটা চওড়া হাসি হেসে তিনি বলে উঠলেনঃ” ও, হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে,মনে পড়েছে,,তুমি সুচিত্রা রায় তো!? টালিগঞ্জে বাড়ি!  অন্নদাশঙ্কর রায় তোমার কী রকম জ্যাঠামশাই হন না!কি, ঠিক বলেছি তো!?”

আপ্লুত সুচিত্রা। কি পরম সৌভাগ্য। এতো বড়ো মানুষটি সব মনে রেখেছেন!!

সুচিত্রা কলকাতার এক শিল্প-সংস্কৃতি প্রেমী বনেদী পরিবারের মেয়ে।পড়াশোনা প্রেসিডেন্সিতে। এখন বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার সাথে যুক্ত।লেখালিখি করেন।তিনি এই গুণী মানুষটির কদর বোঝেন।

তাই নেমে পড়েছেন গাড়ি থেকে।

সুচিত্রা খেয়াল করলেন,যে ঋত্বিকের পেছনে একটি ব্যানার লাগানোঃ”বাংলাদেশের শরনার্থীদের সাহায্যে দান করুন “। পাশে একটা বাক্স।তাতে পথচলতি মানুষ যার যেমন ক্ষমতা বা ইচ্ছা অর্থ  সাহায্য করে যাচ্ছেন।

পাশেই একটা লম্বা টুল…তাতে বসে আছেন হাতে গীটার নিয়ে একজন বিদেশী, গান গাইছেনঃ “Come senators,congressmen,/please heed the call/ Don’t stand in the doorway/

Don’t block up the hall”

গানটা সুচিত্রার শোনা।কিংবদন্তী গায়ক বব ডিলানের গান।

গান থামলো। ঋত্বিক পরিচয় করিয়ে দিলেনঃ”ও হোল স্টিভ টার্নার,গায়ক এবং সাংবাদিক। সম্প্রতি আমেরিকা থেকে এসেছে।স্টিভের সাথে বিখ্যাত কবি অ্যালোন গিনসবার্গও কলকাতায় এসেছেন।

সুচিত্রা আরও জানলেন যে বিশ্ববিখ্যাত কবি গিনসবার্গ সেদিনই সকালে খাবার আর ওষুধ নিয়ে গেছেন বারাসাতের শরনার্থীদের শিবিরে।সঙ্গে গেছেন কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়,সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়,সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, প্রমুখরা। এই এখানকার সংগ্রহ করা টাকা পয়সায় সেসব কেনা হয়েছে।

সুচিত্রা সেদিন অভিভূত হয়েছিলেন ঋত্বিক ঘটকের সেই ভুমিকায়।তিনি সেদিন সুচিত্রাকে বলেছিলেনঃ”এলেই যখন দু’টো টাকা দিয়ে যাও,এইভাবেই জোগাড় করে করে যতটুকু পারি,চেষ্টা করে যাচ্ছি।আমি তো সামান্য মানুষ। “

সুচিত্রা তার কাছে যা ছিল সব   সেই বাক্সে দিয়েছিলেন সেদিন।

ফেরার পথে এক অদ্ভুত আবেগের আবেশে সুচিত্রা সেদিন ভাবছিলেন আজ ৫২ বছর পরেও আমরা ভাবছি, মেঘে ঢাকা তারা,তিতাস একটি নদীর নাম,যুক্তি তক্কো গপ্পো, সুবর্ণরেখা,কোমল গান্ধার, প্রভৃতি বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্রগুলির পরিচালক ঋত্বিক ঘটক রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিক্ষা চাইছেন সেই তাদের জন্যে,যারা আজ অসহায় এই মানচিত্রের একটি ভুখন্ডে। যে ভুখন্ডের অসহায় মানুষদের  জন্যে এই পাগল মানুষটা রোদে জলে পথে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা চাইছেন,সেই মানুষটা কোনো দিনই সেখানে আর হয়তো যাবেন না।

তবুও বিশ্ব বিখ্যাত চিত্রপরিচালক যে ঋত্বিক ঘটককে জগদ্বিখ্যাত চলচ্চিত্রকারদের সঙ্গে এক আসনে বসানো হয়,সেই মানুষটি কেমন নাওয়া-খাওয়া  জলাঞ্জলি দিয়ে রোদে জলে দাঁড়িয়ে সেই সময়ের পূর্ব বাংলার শরনার্থীদের সাহায্যের জন্য ভিক্ষা করছেন।

খ্যাতির আতিশয্যজনিত বিড়ম্বনাকে চুরমার করে ভেঙে দিয়ে ঋত্বিক ঘটক আর্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন।

সেদিনও ছিল আগস্ট মাস

১৯৭০ সাল।

সে আজ ৫২ বছর আগের কথা।

সব রবি-পাঠ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

Related posts

লোকসঙ্গীতের অনির্বাণ আলো আব্বাসউদ্দীন আহমদ: জন্মের ১২৫ বছরে ফিরে দেখা

বিহারের এনডিএ-র জয় তৃণমূলের উদ্বেগের কারণ হতে পারে?

জেদের জয়: ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের বিশ্বজয় নারীসত্তার সাহসিকতার প্রতীক