আড্ডা এবং বাঙালীঃ পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

সারা বিশ্বে গান,কবিতায়,সাহিত্যে, চলচ্চিত্রে আড্ডা নিয়ে কিছু সৃষ্টি করা, বোধহয় বাঙালী ছাড়া আর কোত্থাও পাওয়া যাবে না। বাঙালী গুনগুন করে ওঠে মন খারাপ করা সুরে মনে মনে…”কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই…”


সত্যজিৎ রায়ের মনোলগাস সিনেমা “আগন্তুক”-এ মনোমোহন মিত্রের(ছবিতে উৎপল দত্ত) মতে আড্ডা হোল ‘ হায়েস্ট লেভেল’-এর আলোচনার জায়গা। অবশ্য কথাটা ঠিক,কারন গ্রীকদের জিমনাসিয়ামে সেই ধরনের ব্যাপারই ঘটতো..সেখানে সক্রেটিস,প্লেটো,সফোক্লিস প্রমুখদের পাওয়া যেতো। নিউটনের তো বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতে দিতে গাছ থেকে হঠাৎ আপেল মাটিতে পড়তে দেখে মনের মধ্যে প্রশ্ন জেগে উঠেছিল আর আবিষ্কার হয়েছিল মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব।আবার আমাদের এই বাংলাতে সেই কবে এক কালী মন্দিরের পুজারীকে ঘিরে আড্ডার জায়গাতেই জন্ম নিয়েছিল এক বিরাট কর্মকান্ড,সারা দুনিয়ায় এক নব জাগরনের উন্মেষ ঘটেছিল শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব আর তাঁর গুণমুগ্ধ উত্তরসুরী স্বামী বিবেকানন্দ সহ অন্যান্যদের।


আমাদের দেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে অনেক গোপন আড্ডায় তৈরী হোত দেশমাতৃকার শৃঙ্খল মোচনের জন্য বৈপ্লবিক পদক্ষেপের। আড্ডায় মশগুল থাকতেন রবীন্দ্রনাথ,বিদ্যাসাগর, শরৎচন্দ্র,কাজী নজরুল থেকে সকল সাহিত্যিক এবং কবিরা। চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ,ঋত্বিক ঘটক,মৃণাল সেন,প্রমুখরা। আড্ডা দিতেন সলিল চৌধুরী,হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্নাদে,শ্যামল,মানবেন্দ্র প্রমুখ গানের জগতের দিকপালেরা।তার প্রামান্যতা পাই বিখ্যাত সাড়ে চুয়াত্তর সিনেমাতে মেস বাড়ির আড্ডায় সেই সমবেত গান। বাদ যেতেন না উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়,ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায়,রবি ঘোষ,থেকে শুরু করে রূপোলী জগতের প্রায় সকলেই।

আড্ডায় তোলপাড় হয় খেলার জগতে, তা সে ফুটবল হোক বা ক্রিকেট। আড্ডাতেই ভাবনা চিন্তা হয়েছিল সেই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের, যার নাম মহিষাসুর মর্দিনী…। আড্ডায় বাঙালির মেতে ওঠা তার এক বহমান পরম্পরা,ঐতিহ্য…. এক বুদ্ধিমত্তার মননশীলতার স্বাক্ষর। বাঙালী থাকবে চিরকাল,তার আড্ডাও থাকবে চিরদিন।

Related posts

‘মহিষাসুরমর্দিনী’- কিছু অজানা কথা

‘ইন্ডিয়া দ্যাট ইজ ভারত’, কিছু ঐতিহাসিক তথ্য

তিনিই ছিলেন একমাত্র “ঐক্যপুরুষ”