Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$ID is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 46

Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$post is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 47
একটি ব্রত, একটি উৎসব এবং প্রতিবাদ - NewsOnly24

একটি ব্রত, একটি উৎসব এবং প্রতিবাদ

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

তারিখটা ছিল ১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর (বাংলায় ১৩১২ বঙ্গাব্দের ৩০ শে আশ্বিন),তখনকার বড়লাট লর্ড কার্জন এবং ছোটলাট উইলিয়াম ফ্রেজারের পরিকল্পনায় ঠিক হয়েছিল, ঐদিনই বঙ্গ বিভাজন, মানে অখণ্ড, অবিভক্ত বাংলাকে ভাগ করা হবে, বাংলা ভাগ কার্যকর করা হবে। সময়টা ছিল পুজোর মরশুম। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর পরেই তৃতীয়া তিথির দিন ছিল সেই দিন।

বঙ্গভঙ্গ তথা শাসকবিরোধী আন্দোলন আগে থেকেই চলছিল, বিদেশি জিনিস বর্জন, রবীন্দ্রনাথের রাখীবন্ধনও এই ১৬ অক্টোবর প্রতিপালিত হয়েছিল এইদিনই, আর তার অঙ্গ হিসাবে বঙ্গভঙ্গের জাতীয় শোক থেকেই সেদিন জন্ম নিয়েছিল আশ্বিনের এক মহান উৎসব — “বঙ্গলক্ষীর ব্রত”।

ইতিপূর্বে বাঙালির ঘরে ঘরে বহুপঠিত লক্ষীর পাঁচালীকে এক নতুনরূপে প্রকাশ হয়েছিল।এই ব্রতকথায় বলা হয়েছিল,ইংরেজ রাজার এক ফিচকে ছোকরা নায়েবের কথা,যে সাত কোটি বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি,সহ সবকিছুকে উড়িয়ে দিতে চায়, সাত কোটি বাঙালির হিন্দু মুসলমান এই দুই প্রতিবেশীর,দুই পড়শীতুতো, দুই ভাইয়ের মিলেমিশে একসাথে থাকার অভ্যাসকে ভেঙে খানখান করে দিয়ে আলাদা করে দিতে চায়। এদিকে ভাইয়ে ভাইয়ে আলাদা ঠাঁই করা দেখে বঙ্গলক্ষ্মী চঞ্চলা হয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে বাংলা ছেড়ে যাওয়ার কথা ব্যক্ত করে দিলেন। দেবীকে আবার অচঞ্চলা করার জন্য,পাঁচকোটি বাঙালী হাহুতাশ করতে করতে কেঁদে কেটে মাটিতে গড়িয়ে পড়লো। তারা,মানে বাঙালী শপথ নিল,কসম খেল,প্রতিজ্ঞা করলো যে তারা রেশমী চুরি কিনবে না,পড়বে না।পরের দুয়ারে ভিক্ষা করবে না,মোটা ভাত কাপড়েই দিন কাটাবে। আর সবচেয়ে প্রধান অঙ্গীকার হোল হিন্দু মুসলমান আলাদা হবেই না। আপামর বাঙালির কাতর অনুনয়ে বিনয়ে বঙ্গলক্ষ্মী প্রসন্ন হয়ে বাংলার মাঠ,ঘাট,হাট, জুড়ে আবার অধিষ্ঠাত্রী হলেন,রয়ে গেলেন বাংলায়। ফুলে,ফলে,শস্যে ফসলে, শ্রীবৃদ্ধি আর সম্মৃদ্ধিতে সারা বাংলা ভরে উঠল। আনন্দে একে অন্যকে জটিয়ে নিয়ে বাস করতে থাকল হিন্দু মুসলমান ভাই ভাই।

এই ব্রতের অন্যতম আচার ছিল অরন্ধন। শিশু, রোগী এবং দেবসেবায় ছাড়া বাড়িতে উনুন জ্বলবে না। পরিবারের মহিলারা ঘরে ঘরে আলপনা দিয়ে ঘট স্থাপন করে তাতে হরিতকী, গোটা সুপারী আমশাখা,ফুল ইত্যাদি দিয়ে ঘটের মধ্যে বঙ্গলক্ষ্মীর কল্পিত রূপ প্রতিষ্ঠা করে ব্রতকথা পড়বেন। বঙ্গলক্ষ্মীকে নৈবেদ্য হিসাবে দেওয়া হয়েছিল চিঁড়ে,মুড়ি,মুড়কি,তালফোঁপর,নারকোল নাড়ু ইত্যাদি,ইত্যাদি। আর ব্রতকথা পাঠ শেষে সকলে তিনবার শপথ নেবে –“আমরা ভাই ভাই এক ঠাঁই/ আমাদের ভেদ নাই,ভেদ নাই…।”

সেই থেকেই শুরু। বঙ্গদর্শন পত্রিকাতে লেখা হয়েছিল–“৩০ শে আশ্বিন তারিখে সহস্র সহস্রাধিক,লক্ষ লক্ষাধিক পল্লীবালা, পল্লীরমণী-র সমাবেশে, গৃহে গৃহমাঝে এই ব্রতকথা পাঠ হয়, শঙ্খ বাজানো হয়,উলুধ্বনি দেওয়া হয়, সে এক মহোৎসব। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে এই বঙ্গলক্ষ্মী ব্রত সাধারণ গৃহস্থবাড়ির মহিলাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রচলন হলেও, ঘরে বাইরে সাড়া জাগিয়ে দেয় এই নবতম ব্রত।…এগিয়ে এসেছিলেন মুসলিম ভাইগণও।”

ঐতিহাসিক সুকুমার সেনের স্মৃতিকথায় জানা যায় যে, সুদুর বিহার শরীফ থেকে এসেছিলেন মৌলানা মৌলবী লিয়াকত হোসেন কলকাতায় শুধু এই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্যে।এসেছিলেন কলকাতার নাখোদা মসজিদের ইমাম সাহেব।

তাই বলা যায়, এই কোজাগরীর ব্রত এক আন্দোলনের পরম্পরাগত এক ঐতিহাসিক ঐতিহ্য। এবং শাসক বিরোধিতার সুরেই উৎসব পালন করা, এটাও বাঙালির এক অনন্যসাধারণ ঐতিহ্য। বাংলার মাটিতে এভাবেই মানুষের জন্য মানুষের ধর্ম সবকিছুর ওপরেই স্থান পেয়েছে। তাই আজ ঘরে ঘরে কোজাগরীর আয়োজন। সেখানেই এর সার্থকতা।

Related posts

লোকসঙ্গীতের অনির্বাণ আলো আব্বাসউদ্দীন আহমদ: জন্মের ১২৫ বছরে ফিরে দেখা

বিহারের এনডিএ-র জয় তৃণমূলের উদ্বেগের কারণ হতে পারে?

জেদের জয়: ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের বিশ্বজয় নারীসত্তার সাহসিকতার প্রতীক