পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
১৯৪৭ সাল। অখণ্ড ভারতবর্ষের কিছু দেশীয় নেতা এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্রের ফলে দীর্ঘ একবছরেরও বেশী সময় ধরে(১৯৪৬ সালের ১৬ ই আগস্ট প্রথম দাঙ্গা শুরু হয়েছিল) ভ্রাতৃঘাতী রক্তাক্ত ভয়াবহ দাঙ্গার (যা তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার এবং দেশীয় নেতারা থামানোর কোনো উদ্যোগই প্রায় নেন নি,একমাত্র মহাত্মা গান্ধী, খান আবদুল গফফার খান,শরৎ বসু,(নেতাজীর মেজদাদা),মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, প্রমুখরা বাদে) মধ্য দিয়ে অখন্ড ভারতবর্ষের মানচিত্র টুকরো টুকরো করা হয়েছিল। গান্ধীজি সহ অন্যান্য নেতারা,যারা এই বিভক্ত ভারতবর্ষ চাননি,তাঁরা হতাশায়, মনের ব্যাথায় হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। যেমন হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন অখণ্ড ভারতবর্ষের হিন্দু,মুসলমান, শিখ,প্রভৃতি সমুহ সম্প্রদায়ের সাধারণ জনগন।
স্বাধীনতার পরেও বিভক্ত ভারতবর্ষের এবং সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া পাকিস্তানের(পূর্ব এবং পশ্চিম) বিভিন্ন জায়গাতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং দাঙ্গা লেগেইছিল। গান্ধিজী এর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য একা দুই রাষ্ট্রের নেতাদের কাছে বারবার অনুরোধ করেছিলেন।এমনকি তিনি এই কথাও বলেছিলেন যে প্রয়োজনে তিনি ভারতবর্ষের এবং সদ্য পাকিস্তানের দাঙ্গা বিধ্বস্ত স্থানগুলিতে যাবেন,স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে কি করে দাঙ্গার ভয়ঙ্করতা থামিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা যায় তার উদ্যোগ তিনি নেবেন।
গান্ধীর এই মহান চিন্তাভাবনা বাস্তবে সফল হতে পারেনি।কারন, স্বাধীনতা প্রাপ্তির পাঁচ মাসের মাথায় ১৯৪৮ সালের ৩০ শে জানুয়ারী বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে দিল্লির বিড়লা ভবনে প্রার্থনা সভায় যোগদান করতে যাওয়ার সময়ে তিনি রিভলবারের গুলিতে প্রাণ হারান। নাথুরাম বিনায়ক গডসে নামে একজন মানুষ, যিনি হিন্দু মহাসভার সদস্য ছিলেন,তিনি গান্ধীর প্রার্থনাসভায় যাওয়ার পথে তাঁর সামনে এসে মহাত্মা গান্ধীকে প্রথমে নতজানু হয়ে প্রণাম করে, তারপর গান্ধীর সাথে থাকা আভা বেন এবং মানু বেন গান্ধীকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে গান্ধীজিকে লক্ষ্য করে তিনটি গুলি করেন।দুটি গুলি গান্ধীর শরীর ভেদ করে চলে যায়।গান্ধীজি সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। অকস্মাৎ এই মর্মান্তিক ঘটনায় উপস্থিত সকলেই স্তম্ভিত হয়ে যান। নাথুরাম গডসে এরপর দুহাত ওপরে তুলে আত্ম সমর্পন করেন। তারপর সে এক অন্য ইতিহাস।
আগুনের ফুলকির মতো গান্ধী হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বের দেশে দেশে,সকলেই মর্মাহত,সকলেই হতবাক। কেন? কেন? কেন এই ভয়ানক হত্যাকাণ্ড? গান্ধীজির বয়স তখন ৭৮ বছর।বলা যায় একজন প্রবীণ মানুষ।
হিংসার বিরুদ্ধে শান্তির জন্য যে মানুষটি সারা জীবন লড়ে গেলেন,তিনিই শেষ পর্যন্ত নৃশংস হিংসায় আত্মবলিদান দিয়ে শহীদ হলেন।ইতিহাসের এ এক চরম পরিহাস।
আগামীকাল সেই ৩০ শে জানুয়ারী। সারা দেশে “শহীদ দিবস” অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে পালিত হবে।স্মৃতিতে এবং স্মরণে আলোচিত হবেন স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রথম রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড-এর শহীদ মহাত্মা গান্ধী।
আমাদের রইল তাঁর প্রতি প্রণাম।এবং এইদিন সারা দেশে,তথা এই ভুখন্ডের সব জায়গায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এবং শান্তির সহাবস্থানের জন্য রেখে গেলাম আমাদের জাগ্রত অঙ্গীকার।