Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$ID is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 46

Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$post is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 47
স্বাধীনতার মাসে স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অজানা কাহিনি - NewsOnly24

স্বাধীনতার মাসে স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অজানা কাহিনি

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

সময় এবং মহাকালের পিলসুজে ইতিহাসের যে প্রদীপ জ্বলে–তার নীচেই থাকে অনালোকিত অন্ধকারের অবহেলা। সেই অবহেলিত কথা ও কাহিনি কি আমরা কখনও জানতে পারি?
স্বাধীনতারএই মাসে সেই অনালোচিত অনালোকিত ইতিহাসের পাতায় এসে দাঁড়ালেন এক মহীয়সী বঙ্গনারী। তিনি সাবিত্রী দেবী। কিন্তু কে এই সাবিত্রী দেবী?

অবিভক্ত ভারতবর্ষের চট্টগ্রাম প্রদেশে (এখন বাংলাদেশ) ধলঘাট নামে একটি জায়গা আছে, সেখানকার বাসিন্দা নবীনচন্দ্র চক্রবর্তীর বিধবা স্ত্রী হলেন এই সাবিত্রী দেবী,- সাথে তাঁদের একমাত্র পুত্রসন্তান, নাম রামকৃষ্ণ চক্রবর্ত্তী। সাবিত্রী দেবী ১৮৮৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন এই ধলঘাটেই। বিয়ের পরে তিনি তখনকার দিনে ঋষি অরবিন্দ,বিপ্লবী বারীন ঘোষ, প্রমুখদের তৈরি বিপ্লবীদের অত্যন্ত গোপন “যুগান্তর” গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত হয়েছিলেন।

সেই সময়টা সারা বাংলায়,তথা সারা ভারতবর্ষের সর্বত্র মানুষের মনে একটাই নাম–” চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম… “। ব্রিটিশ শাসক আর ব্রিটিশ পুলিশের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে এই চট্টগ্রাম, আর সেই চট্টগ্রামেরই চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের বীর বিপ্লবীর বাহিনী। তাদের নেতৃত্বে রোগা পাতলা,এক শিক্ষক মাস্টার দা “সূর্য সেন”। অপরদিকে এই বিপ্লবীদের খুঁজে বার করার জন্য ব্রিটিশ পুলিশ গোয়েন্দা সবাই চারিদিকে চিরুনি তল্লাশি চালাচনো শুরু করে দিয়েছে। ফলে,তখন আমাদের দেশের বিপ্লবীরাও বিভিন্নভাবে আত্মগোপন করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন।

এই সাবিত্রী দেবী তাঁর বাড়িতে পথশ্রান্ত, অভুক্ত, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের নায়ক সুর্য সেন-কে, তাঁর সাথে সহযোদ্ধা, নির্মল সেন, অপূর্ব সেন, এবং প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার -কে আত্মগোপন অবস্থায় এই সাবিত্রী দেবী তাঁর বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন।

কিন্তু,মীরজাফর,বিভীষণ-রা চিরকালই থাকে।তাই ১৯৩২ সালের ১২ই জুন গভীর রাতে ব্রিটিশ সেনা-পুলিশ,গোয়েন্দারা সাবিত্রী দেবীর বাড়ি ঘিরে ফেলল। শুরু হয়েছিল, দু’পক্ষের তুমুল গুলির লড়াই। বিপ্লবীদের গুলিতে নিহত হলো সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মিঃ ক্যামেরন। এদিকে ব্রিটিশ পুলিশের, সেনার গুলিতে শহীদ হলেন বিপ্লবী অপূর্ব সেন,বিপ্লবী নির্মল সেন। মাস্টার দা প্রীতিলতা কে নিয়ে অন্তর্ধান হয়ে গিয়েছিলেন রাতের অন্ধকারে।

এরপর ব্রিটিশ পুলিশ সাবিত্রী দেবী এবং তাঁর ছেলে রামকৃষ্ণ -কে গ্রেফতার করে এবং শুরু করে এদের ওপরে অকথ্য, অবর্ণনীয় অত্যাচার। এবং বিচারের নামে প্রহসন করে সাবিত্রী দেবী আর রামকৃষ্ণ-কে তৃতীয় শ্রেণীর বন্দী হিসাবে চার বছরের কারাদণ্ডাদেশ বহাল করে তাদের জেলে রাখে। মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে রাখা হয়। সেখানে সুপারিন্টেন্ডেন্ট ছিল অত্যাচারী শয়তান জেলা মিস্টার কাটারিয়া।এই কাটারিয়া এবার শুরু করে এই সাবিত্রী দেবী এবং তাঁর ছেলে রামকৃষ্ণ -এর ওপরে চরম অত্যাচার।

খেতে দিত না।আর অত্যাচার,অত্যাচার, অত্যাচার। এই নিষ্ঠুরতম বর্বতার কারণে রামকৃষ্ণ -এর হলো যক্ষা রোগ। হাতে পায়ে তার লোহার শিকলের বেড়ি। সেই বেড়ি পরা অবস্থাতেই তাকে মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল।

মা সাবিত্রী দেবী থাকতেন ঐ জেলেরই ফিমেল ওয়ার্ড-এ। মা সাবিত্রী দেবী অন্যান্যদের মারফত খবর পেলেন যে তার ছেলে রামকৃষ্ণ যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

স্বাভাবিকভাবেই মায়ের প্রাণ সন্তানকে দেখার জন্যে উদ্বেল হয়ে উঠেছিল,কিন্তু না অসভ্য ব্রিটিশ শাসক, তাদের সরকারি পুলিশ, প্রশাসন সেদিন একজন মা-কে তাঁর মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি থাকা সন্তানকে দেখতে দেয়নি। রামকৃষ্ণ কয়েকদিন পরেই মারা যান। না মারা যাওয়ার আগে অনেক খুঁজেছিলেন মা-কে,কিন্তু তিনি মায়ের মুখখানা দেখতে পান নি। অপরদিকে মা সাবিত্রী দেবীও সন্তানের মুখটা আর সারাজীবনে দেখতে পান নি।

চার বছর জেলে থাকার পরে সাবিত্রী দেবী ছাড়া পান। তিনি চট্টগ্রামে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন, পুলিশ অনুমতি দেয়নি।তিনি সহায় সম্বলহীন অবস্থায় ছিলেন মেদিনীপুরে,দিন কাটাতেন রাস্তায় রাস্তায়।ভিক্ষা করতেন। না বেশিদিন তিনি বাঁচেন নি। মাস্টারদার নাম তাঁর মুখে শুনে কেউ কেউ সাবিত্রী দেবীকে আশ্রয় দিতেন গোপনে।কিন্তু পুলিশের ভয়ে সেই আশ্রয়ও বেশিদিন স্থায়ী হতো না। তারপর একদিন পথের ধারেই পাওয়া যায় সাবিত্রী দেবীর মৃতদেহ। পরিসমাপ্তি ঘটে এক অলিখিত অবদানের ইতিহাস।

পরাধীন দেশের স্বাধীনতার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন যাঁরা একদিন,তাঁদের জীবনকে বলিদান দিয়ে,–সেদিন তাঁদের রক্ষা করেছিলেন,সমস্ত রকমের অত্যাচারের সম্ভাবনাকে উপেক্ষা, অবহেলা করে নিজেদের জীবনকে বাজী রেখে –এই সকল সাবিত্রী দেবীরা, এই সমস্ত রামকৃষ্ণরা। এঁরা ছিলেন নীরব সর্বংসহা দেশপ্রেমিক। এঁরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেন নি কখনো, দুঃখকে সারা জীবনের পাথেয় করে নিয়ে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বীর বিপ্লবীদের এগিয়ে চলার পথের সঙ্গী হয়েছেন,সাথী হয়েছেন।

কিন্তু স্বাধীন দেশের মানুষ-এর কাছে রয়ে গেছেন তাঁরা এক অনালোচিত অনালোকিত ইতিহাসের অধ্যায়। সেই অজানা অধ্যায় জানার সুত্রপাত হোক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায়। কারন আমাদের দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সত্যিকারের সঠিক ইতিহাস আজ ৭৮/৭৯ বছরেও আমাদের কাছে অজানা।

Related posts

লোকসঙ্গীতের অনির্বাণ আলো আব্বাসউদ্দীন আহমদ: জন্মের ১২৫ বছরে ফিরে দেখা

বিহারের এনডিএ-র জয় তৃণমূলের উদ্বেগের কারণ হতে পারে?

জেদের জয়: ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের বিশ্বজয় নারীসত্তার সাহসিকতার প্রতীক