Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$ID is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 46

Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$post is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 47
তিনিই ছিলেন একমাত্র "ঐক্যপুরুষ" - NewsOnly24

তিনিই ছিলেন একমাত্র “ঐক্যপুরুষ”

মণিপুরের কুকি রাজা কোলাবেলা জানতেন না সেই এক বিরাট সেনাবাহিনীর অধিনায়কের, তথা সেই বিশেষ অতিথির পরিচয়। তবে অনুভব করেছিলেন, সেই অতিথি সত্যিই একজন পুরুষসিংহ। তাই যখন রাজার লোকজন সেনাদের সুন্দর চা খাওয়াচ্ছিলেন, তখন রাজা স্বয়ং দূরে গাছের নীচে খাকি পোশাক পরা দাঁড়িয়ে থাকা সেই ব্যক্তির হাতে তুলে দিয়েছিলেন দুধের পাত্র। অবাক অতিথি জানতে চেয়েছিলেন—“দুধ কেন?” রাজা বলেছিলেন—“বিশেষ মান্যবর অতিথিদের সম্মানে দুধ দেওয়াই সেখানকার দস্তুর।” সে কথা শুনে অতিথি সেদিন বলেছিলেন—“আমার সেনাবাহিনীর সকলে যা খান, আমিও তাই খাই। আমার দেশের অনেক মানুষ রোজ খেতে পান না, তাই আমারও রোজ খাওয়া জোটে না। আপনি আমায় চা দিন।”

এরপর যখন মণিপুরের ইম্ফলে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, ইম্ফলের পাহাড়ের পর পাহাড় লাল হতে থাকল শত সহস্র দেশপ্রেমিক সেনাদের বুকের রক্তে, তখন কুকি রাজা কোলাবেলা জেনে গিয়েছিলেন, ঐ বিশেষ মানুষের পরিচয়—তিনি আর কেউ নন, ব্রিটিশের একমাত্র চরম শত্রু, দেশীয় নেতাদের ভীতির একমাত্র ব্যক্তিত্ব নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু।

অবাক বিস্ময়ে বিস্মিত কুকি রাজা কোলাবেলাকে নেতাজী নিজের হাতে লেখা মণিপুরবাসীর অবদানকে অভিনন্দিত করে সশ্রদ্ধ একটি কাগজ দিয়েছিলেন, আর বলেছিলেন—“ভারত স্বাধীন করার লক্ষ্যে এবং সেই লড়াইয়ে আপনার এবং আমার মণিপুর রাজ্যের সাধারণ মানুষের সাহায্য কখনও ভুলব না, ভুলবে না এ দেশের ইতিহাস। আর এই কাগজটা লুকিয়ে রাখবেন।” কুকি রাজা সেই কাগজ বাক্সবন্দী করে মাটিতে পুঁতে রেখেছিলেন। কিন্তু পরে সেই কাগজ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যেমন, এখন পারস্পরিক বিবাদে হিংসার রক্তে নষ্ট হয়ে গিয়েছে মণিপুরি-কুকি-মেইতেই-নাগা-তামিল-হিন্দু-মুসলিমদের বিনিসুতোর সম্প্রীতির মালায় বেঁধে ফেলা সেই মানুষটির সমস্ত প্রয়াস। অখণ্ড ভারতের সম্প্রীতির সুসমৃদ্ধ ভারতের স্বপ্ন।

সম্ভবত, সেই প্রথম আর সেই শেষবার সুদূর মায়ানমার (বর্মা) থেকে মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, ইম্ফল, কোহিমা পর্যন্ত সমস্ত জনগোষ্ঠী একসাথে, একমনে, একপ্রাণে পায়ে পা মিলিয়েছিল নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর আহ্বানে—দেশমাতৃকার শৃঙ্খলমোচনের ডাকে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইম্ফল ক্যাম্পেইনে Battle of Red Hill ছিল সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী অধ্যায়।
সেই সময় জাপান সেনাবাহিনীর রিপোর্টে বলা হয়েছে, চারটি ডিভিশনে ১ লক্ষ ১৫ হাজার সৈন্য নিয়ে মিত্রবাহিনীকে আক্রমণ করা হয়েছিল। রণাঙ্গনে শহীদ হয়েছিলেন ৬৫ হাজার। আর মিত্রবাহিনীতে নিহতের সংখ্যা ছিল ১২,৬০৩ জন। এর বাইরেও অসংখ্য আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনা এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ডাকে সাড়া দেওয়া স্থানীয় কুকি ও মেইতেই অনেক যুবক সেদিন শহীদ হয়েছিলেন।

মণিপুরের মৈরাংয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রথম ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করেছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু।

১৯৪৪ সালের ১৪ই এপ্রিল। বাংলায় যেমন নববর্ষ, ঠিক তেমনই মণিপুরীদেরও সেদিন নববর্ষ। ঐদিন সকালে মৈরাংয়ে ভারতবর্ষের ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করেছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর কর্নেল শওকত আলি খান। সেদিন তাঁর হিন্দি ভাষণ মেইতেই ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন এম. কৈরেং সিং। আজও মৈরাংয়ে ১৪ই এপ্রিল পতাকা দিবস হিসাবে পালিত হয়, নববর্ষের পাশাপাশি।

মণিপুরের ইতিহাস গবেষক অধ্যাপক সোনাথাং হওকিপ জানাচ্ছেন, সেই সময়ের ব্রিটিশ সেনা এবং গোয়েন্দাদের নথি ও অন্যান্য প্রমাণ থেকে স্পষ্ট যে, মায়ানমার (বর্মা) দখল করার পরে জাপানি সেনাবাহিনী আর এগোতে চায়নি। কিন্তু নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর নির্দেশে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের ভারতের মূল ভূখণ্ডে মণিপুরের ইম্ফল দখল করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। কিন্তু বর্মা থেকে দুর্গম পাহাড়-জঙ্গল পার করে সেনাবাহিনীকে মণিপুরে নিয়ে আসবে কে? সেই সময় কুকিদের শতাধিক একদল হাজির হন সেখানে। তাঁরা বলেন, নেতাজীর জন্যে, দেশের জন্যে তারা প্রস্তুত, তারাই পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে মূল ভারতের ভূখণ্ডে।

সেদিন আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের অভিবাদন জানাতে, তাদের সমর্থন জানাতে মণিপুরের স্থানীয় শত শত মানুষ তৈরি ছিলেন। আর কুকিদের দেওয়া সাহস আর কুকি-মেইতেইদের দেখানো পথেই সেদিন আজাদ হিন্দ বাহিনীর ফার্স্ট ডিভিশন গান্ধী ব্রিগেড কর্নেল এনায়েত জান কিয়ানির নেতৃত্বে ১৯৪৪ সালের ১৮ই মার্চ তামু-মোরে সীমান্তে হাজির হয়েছিল। এবং টেনোওপলের যুদ্ধ জয় করে মণিপুরের পাল্লেল পর্যন্ত দখল করে নেয় তারা।

অপরদিকে শাহনওয়াজ খানের নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সুভাষ ব্রিগেড সেনারা উখরুলে ইম্ফল-কোহিমা সড়ক বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কর্নেল শওকত আলি খানের স্পেশ্যাল ফোর্স বাহাদুর গ্রুপ দখল করে নিয়েছিল মণিপুরের ইম্ফল উপত্যকার মৈরাং।
সেদিন পুরো অভিযানের তদারক করেছিলেন কমান্ডার মহম্মদ জামান কিয়ানি। এই মহম্মদ জামানই বর্মা সীমান্তের চামোলে ফার্স্ট ডিভিশনের সদর দপ্তর তৈরি করেছিলেন।

অধ্যাপক হওকিপ জানাচ্ছেন, ১৯৪৪ সালের ২রা জুলাই পাহাড়ের ওপরে থাকা আজাদ হিন্দের শিবির থেকে নেতাজী স্থানীয় রাজার সঙ্গে দেখা করে ধন্যবাদ জানাতে এসেছিলেন। নেতাজী উখরুল হয়ে নাগাল্যান্ডের চেসেজুতে শেষ শিবির তৈরি করেছিলেন। নাগা জাতীয়তাবাদের জনক জাপ্পু ফিজো ১৯৪৪ সালে নেতাজীর সঙ্গে যোগ দেন। নাগা, কুকি, মেইতেই, পাঙ্গাল, মণিপুরের তামিল, মুসলিম, অল্পসংখ্যক হিন্দু, শিখ—সকলেই নেতাজীর নেতৃত্বকে শিরোধার্য করে রেখেছিলেন।

আজকের সংঘর্ষে বিভাজিত ভারতবর্ষে তথা অন্যান্য প্রদেশের মতো মণিপুরে সকল সম্প্রদায়ের সব পক্ষ একটি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে—যে মেলালে তিনিই, সেই “ঐক্যপুরুষ”ই মেলাতেন। যেমন মিলিয়েছিলেন ১৯৪৪ সালে। যে চার-চারটি মাস মণিপুরের ১২ হাজার বর্গকিলোমিটার ছিল নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর “Provincial Government of Free India”-র অধীনে।
সেই স্মৃতিচারণ করলেন আজাদ হিন্দ সংগ্রহশালার কিউরেটর লইশরাম সাধনা দেবী।

হ্যাঁ, সত্যিই—মেলাতে পারতেন তিনিই, একমাত্র তিনিই।

Related posts

লোকসঙ্গীতের অনির্বাণ আলো আব্বাসউদ্দীন আহমদ: জন্মের ১২৫ বছরে ফিরে দেখা

বিহারের এনডিএ-র জয় তৃণমূলের উদ্বেগের কারণ হতে পারে?

জেদের জয়: ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের বিশ্বজয় নারীসত্তার সাহসিকতার প্রতীক