প্রথম পাতা প্রবন্ধ এ কেমন মুক্তি? বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনের রাশ কী ভাবে হাতবদল হয়ে গেল

এ কেমন মুক্তি? বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনের রাশ কী ভাবে হাতবদল হয়ে গেল

452 views
A+A-
Reset

ইমনকল্যাণ সেন

আওয়ামি লিগের নেতা আর সমর্থকদের বাড়িতে হামলা। সংখ্যালঘুদের বাড়ি, উপাসনালয় আক্রান্ত। কোথাও লাশ ঝুলছে, কোথাও পুড়ছে। সেনা না কি হাতে নিয়েছে নিয়ন্ত্রণ। শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং তাঁর ভারতের উদ্দেশে পাড়ি দেওয়ার পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমনই। একে নৈরাজ্য ছাড়া আর কীই-বা বলা চলে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে পড়ুয়াদের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত পরিণত রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক পালবদলে। যার পরিণামে সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সেনার ঘেরাটোপে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। সোমবার দুপুরে বোন রেহানাকে নিয়ে ঢাকার সরকারি বাসভবন ‘গণভবন’ ছাড়েন তিনি। তার পরেই উন্মত্ত জনতার হামলার শিকার হয় গণভবন। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সংবাদ মাধ্যমের সামনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পাশাপাশি শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানান। কিন্তু তাতে যে কোনো কাজ হয়নি, সেটা স্পষ্ট গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে উঠে আসা খবর এবং ছবি – ভিডিওতে।

যে কোটা আন্দোলনকে ঘিরে এই ঘটনার সূত্রপাত তা হয়ে গেছে ফিকে। শনিবার নতুন করে শুরু হওয়া আন্দোলনে দাবি ছিল একটাই, আর সেটা হল হাসিনার পদত্যাগ। একটু পরে হলেও সেই দাবি মেনে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু এই হিংসাত্মক পরিস্থিতি নিয়ে কী বলবেন আন্দোলনকারীরা। যে ক্ষোভ থেকে এই আন্দোলনের জন্ম, তার সঙ্গে কী সম্পর্ক রয়েছে হাসিনার পদত্যাগ পরবর্তী হিংসার। কিন্তু হালকা হলেও যোগসূত্র কোথাও না কোথাও থাকতেই পারে হয়তো।

বাংলাদেশের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যম প্রথম আলোয় নির্বাচন বিশ্লেষক ও প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা এম সাখাওয়াত হোসেনের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচন হয় একতরফা, যেখানে বিরোধী দলগুলো অংশ নেয়নি। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। এই নির্বাচন আগের রাতেই ব্যালটে সিল মারার ব্যাপক অভিযোগ ছিল। এ নির্বাচন ‘রাতের ভোট’ নামে পরিচিতি পায়। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি আবার প্রধানমন্ত্রী হন। তবে এ নির্বাচনও বিতর্কিত। এতেও প্রধান বিরোধী দলগুলো অংশ নেয়নি। নিজদলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী করে ‘ডামি’ প্রতিদ্বন্দ্বিতার আয়োজন করা হয়। এ নির্বাচনটিকে বিরোধীরা ‘ডামি নির্বাচন’ বলে আখ্যা দেন। ছয় মাসের মাথায় ব্যাপক ছাত্র ও গণবিক্ষোভের মুখে তিনি আজ পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারযোগে দেশ ছেড়েছেন।

অর্থাৎ, সহজেই বোঝা যায়, হাসিনার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। সেসব ক্ষোভই দিনে দিনে পুঞ্জীভূত হয়েছে। সমসাময়িক পরিস্থিতিতে তারই বিস্ফোরণ ঘটে গেল। কিন্তু জনসাধারণের ক্ষোভের বিস্ফোরণে কেন জ্বলছে সহনাগরিক? আন্দোলনের রাশ কী ভাবে সাম্প্রদায়িকদের হাতে চলে গেল? ছাত্রনেতারা কি টের পাননি, তাঁদের আন্দোলন হাইজ্যাক হয়ে গিয়েছে? সংখ্যালঘুরা কেন বেশি করে আক্রান্ত? দেশের ভালো চাওয়া নাগরিক কেন সরকারি সম্পদ ধ্বংসের উল্লাসে মাতল? উত্তর কি আছে?

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.