প্রথম পাতা প্রবন্ধ বিশ্বাসই মানুষের আসল সম্বল — কথামৃত থেকে কোরান, বাইবেল, গীতা — এক সুরে উচ্চারিত এক মানবতাবাদ

বিশ্বাসই মানুষের আসল সম্বল — কথামৃত থেকে কোরান, বাইবেল, গীতা — এক সুরে উচ্চারিত এক মানবতাবাদ

102 views
A+A-
Reset

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

মানুষের জীবনে বিশ্বাসই হলো সবচেয়ে বড় সম্বল। কোরান, বাইবেল, কথামৃত — সব ধর্মগ্রন্থেই এই বিশ্বাসের কথাই একই সুরে উচ্চারিত।

শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বিশ্বাসের গভীর সত্যকে সহজভাবে বলেছেন —

“বিশ্বাস হয়ে গেলেই হলো। বিশ্বাসের চেয়ে বড় আর জিনিস নাই।”
(কথামৃত, পৃ. ২৬)

কোরানে বলা হয়েছে —

“সুতরাং আল্লাহর প্রতি ও তাঁর নিরক্ষর বার্তাবাহক রসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো।”
(সুরা আরাফ, ৭:১৫৮)

বাইবেলেও একই বার্তা —

“I am the resurrection and the life; he that believeth in me, though he were dead, yet shall he live.”
(Bible, John 11:25, Page 1114)

অর্থাৎ ‘belief’, ‘ঈমান’ ও ‘বিশ্বাস’ — তিনটি শব্দে এক অভিন্ন অনুভব, যা মানুষের মনন ও জীবনের ভিত্তি।

বিশ্বাস কোথায় থাকে?

গীতায় বলা হয়েছে —

“ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশে অর্জুন তিষ্টতি।”
(গীতা, ১৮:৬১)

শ্রীরামকৃষ্ণ বলেন —

“ভক্তের হৃদয় তাঁর আবাসস্থান। তিনি সর্বভূতে আছেন বটে, কিন্তু ভক্ত হৃদয়ে বিশেষরূপে আছেন।”
(কথামৃত, পৃ. ৮৩)

কোরানেও একি বাণী —

“জেনে রাখো, আল্লাহ মানুষ ও তাঁর হৃদয়ের অন্তর্বর্তী স্থানে অবস্থান করেন।”
(সূরা আনফাল, ৮:২৪)

জ্ঞান, সদগুণ ও ভক্তি বিষয়ে অভিন্ন শিক্ষা:

শ্রীরামকৃষ্ণ বলেন —

“দয়া, ভক্তি, সহিষ্ণুতা, সেই পরমপুরুষের প্রতি বিশ্বাস।”
(কথামৃত, পৃ. ৪৮)

হজরত মহম্মদ বলেন —

“বুদ্ধি, অধ্যবসায়, সহিষ্ণুতা, দয়া, ভদ্রতা — এইসব হল সদ্জ্ঞানের লক্ষণ।”
(হাদিস, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৩৫, সংখ্যা ১২৯০)

বিশ্বাসের মুক্তি — দ্বন্দ্ব নয়, সম্মানই ধর্ম:

শ্রীরামকৃষ্ণের বাণী —

“যত মত তত পথ। কৃপা হলেই দর্শন হয়। তিনি জ্ঞানসূর্য, সবখানেই তিনি। নিরাকারও সত্য, সাকারও সত্য। তোমার যেটি বিশ্বাস, সেটাই ধরে থাকবে। সকলেই তাঁর সন্তান, সবাই তোমার আপন। ভালোবাসো সবাইকে।”
(কথামৃত, পৃ. ১৮)

কোরানেও বলা হয়েছে —

“ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই; সুপথ ও কুপথ স্পষ্ট।”
(সূরা আল-বাকারা, ২:২৫৬)

আরও বলা হয়েছে —

“তোমার ধর্ম তোমার কাছে যেমন সত্য, তেমনি আমার ধর্ম আমার কাছে সত্য।”
(সূরা আল-কাফিরুন, ১০৯:৬)

অহংকার নয়, সহানুভূতি:

“অহঙ্কার বশে মানুষকে অবজ্ঞা কোর না, উদ্ধতভাবে চলাফেরা কোর না; কারণ, আল্লাহ কোনো উদ্ধত অহঙ্কারীকে ভালোবাসেন না।”
(সূরা ক্কাসাস, আয়াত ২৮:২৪৮)

‘এক বই, দুই নাই’ — আধ্যাত্মিক ঐক্যের বার্তা:

শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বেদ, বেদান্ত, গীতা, কোরান, বাইবেল — সবকিছুকেই আত্মস্থ করেছেন। তাঁর শিক্ষায় দেখা যায় —
কোরানের আধ্যাত্মিক সুর বহু স্থানে ‘কথামৃত’-এর বাণীতে প্রতিধ্বনিত
একই সত্য, এক মানবতা, এক ঈশ্বরচেতনা — “এক বই দুই নাই”।

মানবতার সুরে চূড়ান্ত বার্তা:

“সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।” — এই কথাটিই আজকের সময়ের বার্তা।

রবীন্দ্রনাথের ভাষায় —

“আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া, বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া।”

কাজী নজরুল ইসলামের কণ্ঠে —

“গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।”

পল রোবসন বলেছিলেন —

“We are on the same boat, brother.”

মানবতাই একমাত্র ধর্ম:

এই বিশ্ব, এই দেশ, এই বাংলা ও প্রতিবেশী দেশগুলিতে শান্তি, সম্প্রীতি, সহানুভূতি প্রতিষ্ঠিত হোক।
মানুষ যেন মানুষের পাশে থাকে, একে অপরের চোখের জল মুছে দেয়।

“Be sympathetic, Be empathetic.”
“সহানুভবী হও, সমানুভবী হও।” (শতদল বিবস্বান)
“মানুষ বড় অসহায়, মানুষের পাশে দাঁড়াও।” (শক্তি চট্টোপাধ্যায়)

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.