পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশ হিসাবে পরিচিত হোল “কুম্ভমেলা” তথা “মহাকুম্ভ মেলা”। অমৃতকুম্ভের সন্ধানে যুগে যুগে মানুষের এই সমাবেশের মেলাটি ভারতবর্ষের যে যে স্থানে অনুষ্ঠিত হয়,তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ,–যেখানে গঙ্গা,যমুনা,আর সরস্বতী নদীর ত্রয়ী মিলনস্থল। হরিদ্বারে (গঙ্গা নদী), মহারাষ্ট্রের নাসিকে (গোদাবরী নদী), উজ্জ্বয়িনী(শিপ্রা নদী),পশ্চিমবাংলাতে হুগলী জেলার ত্রিবেণী-তে, তামিলনাড়ু-তে কুম্বকোনামে(কাবেরী নদী) স্থানে। এছাড়াও, কুরুক্ষত্রে সোনিপতে,নেপালের পানাউটি-তেও কুম্ভমেলা বা মাঘীমেলা,মকরমেলা নামেও অনুষ্ঠিত হয়। UNESCO এই কুম্ভমেলা তথা মহাকুম্ভমেলা-কে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক পরম্পরার এক বিশেষ ঐতিহাসিক ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
কুম্ভ মানে কলস,ঘট,বা পাত্র। এই কুম্ভের মধ্যে অমৃত বা আধ্যাত্মিক পবিত্রতা বিরাজমান। এই প্রেক্ষিতে কিংবদন্তিমূলক কাহিনী আমাদের ঐতিহাসিক এবং পৌরাণিক বৈদিক গ্রন্থাদিতে পাওয়া যায়। যেমন, ঋগ্বেদে (১০/৮৯/৩), সাম বেদে (৬/৩), যজুর্বেদে (১৯/১৬), অথর্ব বেদে( ১৯/৫৩/৩)।
অনেকেরই বিশ্বাস,যে এই কুম্ভমেলার বা এই অমৃতমহাকুম্ভ মেলার উদ্ভব হয়েছিল পুরাকালের সমুদ্র মন্থন থেকে। সংস্কৃত পুরানের ওপরে গবেষণার জন্য বিখ্যাত ইংরেজ পন্ডিত Georgio Bonazoling – এর অভিমত অনুযায়ী, এইগুলি কালপূর্বধারণা ব্যাখ্যা, যা সেই কোন অনাদিকাল থেকে পরম্পরাগতভাবে চলে আসছে। সমুদ্র মন্থনের আদি কিংবদন্তী যেমন বৈদিক যুগের বিভিন্ন গ্রন্থে (আনুমানিক ৫ হাজার খ্রীস্টপূর্ব বছর আগে থেকে–৫০০ খ্রীস্টপূর্ব বছর সময়কালে রচিত) পাওয়া যায়।
হিন্দু মতে শুভশক্তি তথা ভগবান বিষ্ণু, দেবাদিদেব মহাদেব,সহ অন্যান্য দেবতাদের সাথে অশুভশক্তি অসুরদের পারস্পরিক দ্বন্দের কাহিনী উল্লেখ করা আছে। এই কুম্ভ তথা মহাকুম্ভমেলায় সূর্য, চন্দ্র এবং বৃহস্পতির মহাজাগতিক একটি সম্পর্ক এবং বিশেষ ভুমিকা আছে।