পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
আমাদের বাংলা তথা ভারতবর্ষের প্রধান উৎসবগুলির অন্যতম হোল মকর সংক্রান্তি। যা দেশের সব জায়গায় পালিত হয়। সংক্রান্তি শব্দের মানে হোল গমন করা। নিজের কক্ষপথ থেকে সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশ করার দিনকে মকর সংক্রান্তি বলে। মকর সংক্রান্তিকে ঘিরে অনেক লোক প্রবাদ এদেশে শোনা যায়।
যেমন,শোনা যায়,এই দিনে নাকি মহাভারতের পিতামহ ভীষ্ম শরশয্যায় ইচ্ছামৃত্যু বরন করেছিলেন। আবার শোনা যায়, এই দিনে সূর্য নাকি নিজের সন্তান মকর রাশির অধিপতি শনির বাড়িতে বা ঘরে এক মাসের জন্য বসবাস করতে যায়। শোনা যায়, দেবতাদের সঙ্গে চিরশত্রু অসুরদের যুদ্ধ এইদিনে নাকি শেষ হয়। কপিল মুনির তপস্যা সিদ্ধ হওয়ার দিনটিই নাকি মকর সংক্রান্তির দিন। তাই এই দিনে সারা দেশে সেই উপলক্ষে পূণ্য স্নান করেন লক্ষ লক্ষ ভক্তজনেরা।মকর সংক্রান্তিতে এই বাংলার দক্ষিণেও কপিল মুনির আশ্রমকে কেন্দ্র করে গঙ্গাসাগরে বসে বিরাট মেলা। শুরু হয় পূণ্য স্নান।সেখানে অংশ নেন সারা দেশ থেকে আসা লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থীর দল। কথায় বলে সব তীর্থ বারবার,গঙ্গাসাগর একবার। এই গঙ্গাসাগরের স্নানের বিষয়টি বহু প্রাচীন। মহভারতে,রামায়নে, সন্ত তুলসীদাসের জীবনীতে,গুরু নানকের মাহাত্ম্যে,এমন কি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের “দেবতার গ্রাস” কবিতাতেও উল্লেখ আছে।
তবে লোককথা যাই হোক, আমাদের দেশে নতুন ফসল বা শস্য ঘরে তোলার উৎসবের নামই হোল মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তি উৎসব। এইদিনে সূর্য-এর দক্ষিনায়ন শেষে উত্তরায়ণান্তবৃত্ত-এর শুরু।
আমাদের এপার ওপার দুই বাংলাতেই এই মকর সংক্রান্তির দিনে নবান্ন উৎসব শুরু হয় প্রানের আনন্দে। সেখানে থাকে নতুন ধানের গুছি,সর্ষে ফুল,ইত্যাদি। তাছাড়া, এই বাংলার বীরভুম জেলার কেন্দুলিতে মকর সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে বসে কবি জয়দেবের মেলা।সেখানকার মেলায় ভীড় করে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা বাউলের দল। এই মকর সংক্রান্তিতে পুরুলিয়া,বর্ধমান,বাঁকুড়া, জেলাতে টুসু উৎসব বা মকর পরব শুরু হয়।
বাংলার ঘরে ঘরে এই মকর সংক্রান্তির দিনে আউনি-বাউনি পালন করা হয়। মানুষ মেতে ওঠে আনন্দের মেজাজে।পিঠে,পুলি,সরুচাকলি,পাটিসাপটা,নতুন গুড়ের পায়েস,ইত্যাদির গন্ধে ভরে ওঠে বাংলার আকাশ বাতাস।
বাংলার বারো মাসের তেরো পার্ব্বনের সংস্কৃতিতে তাই মকর সংক্রান্তি তথা পৌষ সংক্রান্তি এক ঐতিহ্যময় পরম্পরার উৎসব, যা আজও বাঙালির জীবনে প্রবহমান।