মে দিবস: সে দিন উদাত্ত কণ্ঠে গান গেয়েছিলেন কাজি নজরুল ইসলাম

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

এই দুনিয়াতে এমন একটা সময় ছিল যখন খেটে খাওয়া মানুষদের সেই সূর্য ওঠার সময় থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত পরিশ্রম করতে হোত। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই প্রথার বিরুদ্ধে ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে কয়েক হাজার নারী পুরুষ শ্রমিক ৮ ঘণ্টা কাজের ন্যায্য দাবীতে শান্তিপূর্ণ জমায়েত করেন।বিনা কারণে, সেই শ্রমিকদের সেইদিন ওপরে অমানবিকভাবে মালিক পক্ষের পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল। সেই মুহূর্তেই মারা গিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন খেটে খাওয়া মানুষ। হে মার্কেটের রাস্তা সেদিন শ্রমিকদের রক্তে ভিজে গিয়েছিল। সেই রক্তাক্ত শ্রমিকদের রক্তে ভেজা ছেঁড়া জামার একটি টুকরো একটি লাঠির সঙ্গে জড়িয়ে বাকী শ্রমিকরা আকাশের দিকে তুলে পতাকার মতো উড়িয়েছিল আর গণকণ্ঠ বজ্র নিনাদে বলে উঠেছিল “ইনকিলাব জিন্দাবাদ”।

সে এক ইতিহাস। সারা পৃথিবী সেদিন স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। মানবাধিকারের প্রতি এ হেন নিন্দনীয় নৃশংসতায়। সারা বিশ্বে চলেছিল লাগাতার আন্দোলন। ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে। অবশেষে সেই আন্দোলন জয়ী হয়।

তারপর ১৮৯০ সাল থেকে সারা বিশ্বে শ্রমিক কৃষক, মেহনতি, সমস্ত পেশার নারী পুরুষ নির্বিশেষে ১লা মে-র দিনটিকে “মে-দিবস” হিসাবে পালন করে আসছে।

মানবাধিকারের, মানব সভ্যতার ইতিহাসে তাই মে-দিবস এক অনন্য ইতিহাস।

আমাদের ভারতবর্ষে প্রথম মে দিবস পালিত হয়েছিল ১৯২৩ সালের ১লা মে তারিখে। কলকাতায় সেদিন সেই মে দিবসের পালনে উদাত্ত কণ্ঠে গান গেয়েছিলেন সদ্য যুবক কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি গেয়েছিলেন “ইন্টারন্যাশনাল ” ফরাসী ও ইংরেজি গানের বাংলা অনুবাদ,যা তিনি নিজেই করেছিলেন তাঁর বন্ধু মুজফ্ফর আহমেদ্-এর একান্ত অনুরোধে। গানটির প্রথম স্তবক, ‘জাগো অনশন বন্দী ওঠোরে যত,জগতের লাঞ্চিত ভাগ্যহত…. ’।  ১লা মে মেদিবস আজও তার স্বমহিমায় সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়ে আসছে। পালিত হয়ে আসছে মেহনতী মানুষের শপথ হিসাবে।

Related posts

‘মহিষাসুরমর্দিনী’- কিছু অজানা কথা

‘ইন্ডিয়া দ্যাট ইজ ভারত’, কিছু ঐতিহাসিক তথ্য

তিনিই ছিলেন একমাত্র “ঐক্যপুরুষ”