Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$ID is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 46

Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$post is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 47
ওগো আমার ব্রাত্যজন...আমি তোমাদেরই লোক - NewsOnly24

ওগো আমার ব্রাত্যজন…আমি তোমাদেরই লোক

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

গীতাঞ্জলির বিশ্বজয়ের আড়ালে যেন অনেকটাই ঢাকা পড়ে যান সমাজের নিত্যদিনের সাধারণ মানুষের কবি,ব্রাত্যজনের কাছের মানুষ,অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো আপোষহীন সত্ত্বার এক অদ্বিতীয় জাগ্রত মানুষ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রাশিয়ার ভ্রমণ কবিকে আকৃষ্ট করেছিল ঠিকই, কিন্ত,তারও অনেক আগেই রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ব্রাত্যজনের কথা– যেমন,” হে মোর দুর্ভাগা দেশ যাদের করেছ অপমান,/অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান..”।(২০ শে আষাঢ়/১৩১৭ বঙ্গাব্দ, ইং..১৯১০ সাল)।

বিশ্ব গণদেবতাকে তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন সমাজের আপামর সাধারণ মানুষের মধ্যে নরনারায়ণ রূপে, তাই তিনি লিখেছিলেন.. “যেথায় মাটি ভেঙে করছে চাষা চাষ,/ পাথর ভেঙে কাটছে যেথায় পথ,খাটছে বারোমাস..।” ( ২৭শে আষাঢ়,১৩১৭ বঙ্গাব্দ, ১৯১০ সাল)।

রুশ বিপ্লবের আগে,১৯১৪ সালে (১৩২১ বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাসে) “লোকহিত ” প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন.. “ধনের ধর্মই অসাম্য।…ধনের বৈষম্য লইয়া যখন সমাজে পার্থক্য ঘটে, তখন ধনীর দল সেই পার্থক্যকে সমুলে ঘুচাইতে ইচ্ছা করেনা,অথচ,সেই পার্থক্য যখন বিপদজনক হইয়া উঠে তখন বিপদটাকে কোনোমতে ঠেকাইয়া রাখিতে চায়। তখন পেটের অন্নের বদলে ঘুম পাড়াইবার গান শোনানো হয় বেশী। “

কবি ১৯৩০ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর একটি চিঠিতে লিখেছেন… ” মানুষের সভ্যতায় চিরকালই একদল অখ্যাত লোক থাকে,তাদের সংখ্যাই বেশি,..দেশের সম্পদের উচ্ছিষ্টে তারা পালিত। সবচেয়ে কম খেয়ে,কম পরে,কম শিখে,বাকি সকলের পরিচর্যা করে,সকলের চেয়ে বেশি তাদের পরিশ্রম করে,বিনিময়ে পায় তারা সকলের চেয়ে বেশি অসম্মান।… তারা রোগে মরে,উপোসে মরে,…লাথি-ঝাঁটা খেয়ে মরে।”

দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের আর্থিক দৈনদশার মূল কারণ যে ধনের অসম বণ্টন, সেই অসাম্যের বিরুদ্ধেই রবীন্দ্রনাথের বিদ্রোহ। তাই তিনি লিখেছিলেন… উপেনের কথা(দুই বিঘা জমি), পুরাতন ভৃত্য কেষ্ট-র কথা(পুরাতন ভৃত্য), ফটিকের কথা(ছুটি), সেই ছেলেটার কথা(ছেলেটা), ইঁটের পাঁজায় কাজ করা মানুষের কথা,অবহেলিত মুসলমান মেয়ের কথা(মুসলমানীর গল্প),… এছাড়াও তিনি লিখেছিলেন.. “ওরা চিরকাল টানে দাঁড়,ধরে হাল,ওরা মাঠে মাঠে বীজ বোনে,পাকা ধান কাটে–ওরা কাজ করে,নগরে প্রান্তরে,দেশে দেশান্তরে। “

রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করে গেছেন বঞ্চিত, শোষিত, অবহেলিত-উপেক্ষিত মানুষের হোয়ে,..যাদের শেষ পরিণাম–“কি যন্ত্রণায় মরেছে পাথরে নিষ্ফল মাথা কুটে…”।

শোষণবাদী ধন-বৈষম্যজাত ক্যাপিটালিজম সভ্যতার বিরুদ্ধে, যান্ত্রিকতাবাদের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ প্রতিবাদ “রক্ত করবী” নাটক(১৩৩১ বঙ্গাব্দের আশ্বিন সংখ্যা /প্রবাসীতে প্রকাশ //১৯২২ সাল)।সেখানে কবি বলেছেন সারা পৃথিবীর ধন-সম্পদের অধিকার মুষ্টিমেয়র হাতে, আর বাদবাকিরা সব “রাজার এঁটো..”। সস্তার শ্রমের ওপরে কুক্ষিগত ধনের ঐশ্বর্য ঝলমল করে।সেই ঔজ্জ্বল্যের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় সাধারণ মানুষের হাহাকার। সেইখান থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে আহ্বান জানান কবি।আর তখনই গণ-বিপ্লবের কেতন ওড়ান কবি…আপামর ব্রাত্যজনের হয়ে।

” শত শত সাম্রাজ্যের ভগ্নাশেষ ‘পরে..” যারা নিরলস, চিরকাল কাজ করে যায় মুখ বুজে,সেই আপামর সাধারণ খেটে খাওয়া কবি,তথা ব্রাত্যজনের কবি রবীন্দ্রনাথ ১৯৩৮ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারী “ম্যাঞ্চেস্টার গার্ডিয়ান” পত্রিকাতে লিখেছিলেন… “The future lies in our learning to ally ourselves with those human force in the World, wherever found, which are seeking to end altogether the exploitation of man by man,and of man by matter and nation.”—ব্রাত্যজনের রবীন্দ্রনাথ বললেন শেষ কথা..” এই বিশ্বে চিরকালের জন্য প্রতিষ্ঠিত হবে নির্যাতিত জনগণের জীবন ও স্বাধীনতার সৌষ্ঠব। “

ব্রাতজনের সখা হে রবীন্দ্রনাথ, তোমায় নমি বারংবার।

Related posts

লোকসঙ্গীতের অনির্বাণ আলো আব্বাসউদ্দীন আহমদ: জন্মের ১২৫ বছরে ফিরে দেখা

বিহারের এনডিএ-র জয় তৃণমূলের উদ্বেগের কারণ হতে পারে?

জেদের জয়: ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের বিশ্বজয় নারীসত্তার সাহসিকতার প্রতীক