শ্রীনীলমাধব, শ্রীজগন্নাথ, শ্রীক্ষেত্র এবং শ্রীচৈতন্য, একাকার রথযাত্রায়…লিখলেন পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
পুরীর রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন নীলমাধবের পুজো দিতে চাইলেও মূর্তি খুঁজে পেলেন না। রাজার স্ত্রী গুন্ডিচাদেবী একদিন সমুদ্রে নিমকাঠ ভেসে আসার স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নে তাঁকে নিমকাঠের মূর্তি গড়ে পুজো করার আদেশ দেন দেবতা নীলমাধব। তারপর অনেক ঘটনা প্রবাহে তৈরী হয়েছিল শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেব,বলরাম, সুভদ্রার বিগ্রহ। শুরু হয় পুজো। সেসব স্মরণাতীত কালের কথা।
আজ থেকে ৬০০ বছরের বেশী সময়কালে আমাদের বাংলার নবদ্বীপের শ্রীচৈতন্য কৃষ্ণপ্রেমে মাতোয়ারা হয়ে সারা ভারতবর্ষ পরিক্রমন শেষে গিয়ে উপস্থিত হন নীলাচলে শ্রীক্ষেত্র পুরীধামে। তখন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ভাবোন্মাদের অবস্থা। তিনি শ্রী জগন্নাথের মূর্তিতে প্রত্যক্ষ করছেন স্বয়ং বিষ্ণুর অবতারকে,শ্রীকৃষ্ণকে,শ্রী নরনারায়ণ-কে।
সারাদিন সারারাত চলছে শ্রীহরি সংকীর্তন। চলছে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর লীলাময় লীলা। সেই সময়কালের এই বাংলায়,উড়িষ্যায়,এবং সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর লীলাময় লীলায় বিভোর হয়ে উঠেছিল সাধারণ মানুষ থেকে রাজা-রাজড়ার দল,সুলতানরা,সকলেই।
কোনও জাতপাত নেই,উচ্চনীচ ভেদাভেদ নেই, ধনী-গরীব নেই, শুধু মানুষের সাথে মানুষের মিলন। আনন্দের স্রোতধারায় ভেসে যাচ্ছে প্রেমের অশ্রুধারা দু চোখ বেয়ে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর। সাথে নিত্যানন্দ,শ্রীবাস অদ্বৈত,যবন হরিদাস,রূপ গোস্বামী,সনাতন গোস্বামী,মীরাবাঈ,সহ সমাজের সকল স্তরের বঞ্চিত অপমানিত মানুষ। মানুষের মধ্যেই বিরাজ করছেন ভগবান।মানুষের সেবার মধ্য দিয়েই খুঁজে যাচ্ছে মানুষ ভগবানকে। এমনকী পশু পক্ষীদের মাঝেও ভগবানকে প্রত্যক্ষ করিছেন ভক্তরা।
সে এক ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের পরম্পরা। সারা জগতে তার পড়তে লাগলো প্রভাব।
এই রথযাত্রায় তাই আজও পথে নামেন জগতের নাথ শ্রী জগন্নাথ। তাঁর রথের রশিতে টান দেন সমাজের সকল স্তরের মানুষ।
যার প্রভাব ফেলেছে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে।আমরা ভালোবাসতে শিখেছি মানুষকে। সেখানে নেই কোনও ভেদাভেদ।
শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ছিলেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর এক প্রকট রূপ।তাই পুরীতে শ্রীজগন্নাথের বিগ্রহের মাঝেই বিলিন হয়ে আছেন শ্রীনীলমাধব,শ্রীচৈতন্য, শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব।
প্রণাম জানাই প্রণাম জানাই প্রণাম জানাই, আজ রথের দিনে সকল স্তরের সকল মানুষকে নরনারায়ণ রূপে।