Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$ID is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 46

Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$post is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 47
মায়ের আঁচল যেন স্বাধীনতার   নকশীকাঁথা - NewsOnly24

মায়ের আঁচল যেন স্বাধীনতার   নকশীকাঁথা

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

সেই কোন সকাল থেকে আকাশে বাতাসে স্বাধীনতা মাখানো গান বাজছে, “বন্দে মাতরম,বন্দে মাতরম” “মেরে ওয়াতন কী লোগো…” পতাকা পতপত করে উড়ছে। বেশ কেমন যেন একটা শিহরণ জাগছে সারা শরীরে। দানাদারের রস লাগা হাতটা ইউনিফর্ম-এ মুছে সে এগোচ্ছে দড়িতে পতাকা লাগানোর শিকলির দিকে।একটা কাগজের পতাকা সে নিয়ে যাবে আজ বাড়িতে। কাল দিদিমনি ক্লাসে জিজ্ঞাসা করেছিল,”স্বাধীনতা মানে কিছু বুঝিস?! আমাদের জাতীয় পতাকার গায়ে কত শত বীর বিপ্লবীদের রক্ত লেগে আছে,জানিস!”

সবাই যা জানে,তাই সেও জানে, স্বাধীনতা মানে ১৫ ই আগস্ট। সারাদিন হইচই,মাইকে গান,মিস্টি খাওয়া, ক্লাবে ক্লাবে ফিস্টি, ডিজে বাজবে—ঝিং কাড়া,ঝিং কাড়া, এইসব।

না, দিদিমনি বলেছিল স্বাধীনতা মানে ক্ষুদিরাম বসু, বিনয়-বাদল-দীনেশ, মাতঙ্গিনী হাজরা, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, মাস্টার দা, ভগৎ সিং, লক্ষীবাঈ,নেতাজী আরও, আরও অনেক অনেকের নাম।

শিকলিতে টান মারল, যাঃ, কাগজের পতাকাটা মাঝখান দিয়ে দু-টুকরো হয়ে গেল। মনে পড়ল,তার ঠাকুমার,দিদিমার কথা। তারা বলে,”স্বাধীনতা!? বুক খান চির‍্যা দু-টুকরা কইর‍্যা আমাগো মাটি লইয়া নিল এহন হেইডা হইল স্বাধীনতা পুড়্যা কপাল”।

দাদু নাকি ফ্রিডম ফাইটার ছিলেন।না পেনশন নেননি। বাবার কাছে শুনেছি দাদু নাকি বলতেনঃ..”স্বাধীনতা  কি তা তোরা জানিস কি? আমরা ইংরেজের সাথে লড়েছি।আমরা এই ভাগাভাগি চাইনি। কিন্তু তলে তলে নেতারা সব নিজেদের কোলে ঝোল টানতেই একটা দেশের মানচিত্রকে ছিড়েখুঁড়ে ফেলল। সবাই খালি দেশের সেবার নামে নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত।চারিদিকে করাপশন, ঘুষ,তেলবাজি,খেয়োখেয়ি,…

এইসবের জন্যে শহীদ হয়েছিলেন বিপ্লবীরা?আর তাদের দেখে আমরাও নিজেদের শেষ করে দিলাম..?! উফ্ এই বুকের ভিতরটা বড়ো  কষ্ট হয়,বুঝলে বড়ো কষ্ট হয়…”। দাদুর চোখের কোল ভিজে উঠত। নিজেই নিজের কপাল চাপড়াতেন।

সন্ধ্যেবেলায় ফাংশন হবে। তার মাইক আলো লাগাতে লাগাতে পাড়ার ২৫/৩০ বছরের ছেলেটা সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে ভাবতে থাকে,এরা সব এতো  কষ্ট করেছিল কেন? কী লাভ হয়েছে তাতে? বোকার দল সব।একদল রক্ত দিল,জীবন দিল,আর বাকীরা ফোকটসে লুটেপুটে খেয়ে যাচ্ছে। সেই কবে শুরু হয়েছে,আজও  চলছে।

নমাজের শেষে আর একজন  যাচ্ছিল, শহিদ বেদীতে একটা ফুল দিয়ে অপলকে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে দেখছিল আর মনে মনে ভাবছিল, আচ্ছা কে যেন বলেছিল এ স্বাধীনতা নাকি তার নয়, তাকে নাকি!!

হঠাৎ মনে পড়ল তার প্যাণ্টের পকেটে রাখা আজ সকালেই পতাকা তোলার জায়গায় পাওয়া চকলেট-টার কথা।হাত দিয়ে দেখে নিল পকেটটা। ঘরে ফিরে ছোট বোন কে দেবে…।মনে মনে বলে..”আল্লা,আমার বোনটারে ভালো রেখো”।

আবার,তার চোখ বেদীটার দিকে। ছবিটা কি সুন্দর মাথায় টুপি, চোখ দুটো কি সুন্দর।ও জানে ছবিটা নেতাজীর,আর পাশের ছবিটা ভগৎ সিংয়ের। ওর খুব ভালো  লাগে ভগৎ সিংকে। ভগৎ সিং,নেতাজী,গান্ধীজি কি তার নয়? সে বেশি লেখাপড়া জানেনা,তবু এটা সে জানে যে তার বাবা সেনানী ছিল,বর্ডারেই গুলি লাগে,মারা যান। অনেক ছোটবেলার কথা তার মনে পড়ে। বাবাকে নিয়ে এসেছিল কফিন বাক্সতে করে। ওপরে ছিল তেরঙ্গা পতাকা চাপা দেওয়া। সবাই কাঁদছিল…সেও কাঁদতে কাঁদতেই সেই পতাকাটাকে খুব ভালো করে লক্ষ্য করে, মন দিয়ে দেখেছিল। তার সব মনে আছে।

পরে স্কুলে যেদিন মাস্টারমশাই জিজ্ঞাসা করেছিল আমাদের জাতীয় পতাকার কয়টি রঙ?ক্লাসের সক্কলে বলেছিল তিনটে। একমাত্র সে বলেছিল “আমাদের জাতীয় পতাকার ৪টা রঙ।”

মাস্টার মশাই বিরক্তির ভঙ্গিতে তাকিয়ে বলেছিলেনঃ “কি করে? “

সে উত্তরে বলেছিলঃ “গেরুয়া,সবুজ,সাদা, আর আমার আব্বুর কফিনের ওপরে তেরঙ্গা পতাকায় দেখেছিলাম এই তিনটে রঙের  সাথে মাঝে মাঝে লাল রঙ লেগে ছিল….”।

তখন, বুঝিনি আজ বুঝি,ওটা আমার সিপাহী আব্বুর রক্ত….যে রক্ত দিয়ে আমার আব্বু এই দেশকে রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হয়েছিলেন। তাই তো এই মাটি,এই দেশ,তারও…সেও এই দেশের জন্যে আব্বুর মতো জান দিয়ে দিতে পারে।

সে মাথা নীচু করে প্রনাম করল শহীদ বেদীতে,মাথার ওপরে মায়ের আঁচলের মতো উড়ছে তার,আমার,আমাদের দেশের জাতীয় পতাকা।

স্বাধীনতার নকশীকাঁথায় রাম রহিম সবাই একসাথে বেঁচেবর্তে থাকবে। শুধু স্বাধীনতার দিনে নয়,সারা বছর আমাদের তিরঙ্গা জাতীয় পতাকা মায়ের আঁচলের মতো আমাদের মাথার ওপরে থাকবে আশীর্বাদ হিসাবে, দোয়া হিসাবে।

Related posts

লোকসঙ্গীতের অনির্বাণ আলো আব্বাসউদ্দীন আহমদ: জন্মের ১২৫ বছরে ফিরে দেখা

বিহারের এনডিএ-র জয় তৃণমূলের উদ্বেগের কারণ হতে পারে?

জেদের জয়: ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের বিশ্বজয় নারীসত্তার সাহসিকতার প্রতীক