পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
আমরা সবাই জানি, শ্রীমায়ের সেই অমৃত কথাগুলি—
“মন আলগা হলেই যত গোল বাধায়”,
“ভাঙতে সবাই পারে, গড়তে পারে ক’জনে?”,
“সহ্যের সমান গুণ নেই”,
“অন্যের দোষ দেখার আগে নিজের দোষ দেখো”—
এই উপদেশগুলি আমাদের কাছে বহুশ্রুত।
আজ যখন আমাদের দেশের সমাজজুড়ে অসহনীয় অসহিষ্ণুতা, সহিংসতা ও স্বার্থান্ধতা প্রতিদিন আরও প্রকট রূপ নিচ্ছে, তখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অভ্যাসে আন্তরিকভাবে শ্রীমায়ের নির্দেশিত পথ গ্রহণ করার সময় এসেছে। এই দায়িত্ব আমাদের সকলের। এই বাক্যবন্ধগুলি আমাদের বৌদ্ধিক উন্নতিকে ত্বরান্বিত করবে, গড়ে তুলবে উপযুক্ত মূল্যবোধ, সামাজিক ও রাষ্ট্রিক সচেতনতা, পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক সংবেদনশীলতা এবং সহিষ্ণুতা। তৈরি করবে একজন দায়িত্বশীল ও আনন্দময় মানুষ।
সহমর্মিতা, সহযোগিতা, পারস্পরিক আদানপ্রদান ও দরদী মনোভাবের উপর দাঁড়িয়ে থাকুক আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও সামাজিক সহাবস্থান। যেখানে সকলকে যুক্ত করে সামগ্রিক উন্নতির লক্ষ্য নিয়ে মানবিক মূল্যবোধে স্থিত একটি পরিবেশ সমাজের প্রতিটি স্তরে বিন্যস্ত হবে। এটাই হবে শ্রীশ্রী মা সারদামণির প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা।
২০২৩ সালে OECD বিশ্বের ১৬টি দেশের ১০–১৫ বছরের স্কুলছাত্রছাত্রীদের নিয়ে একটি সমীক্ষা চালায়। সেখানে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক উদারতা, সৃজনশীলতা, সহিষ্ণুতা, দায়িত্ববোধ, আত্মসংযম, উদ্যম, পারস্পরিক সম্পর্ক ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বিচার করা হয়। লক্ষ্য ছিল এমন এক ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে চিহ্নিত করা, যারা সকলকে নিয়ে চলতে পারবে, হৃদয় উন্মুক্ত রাখতে পারবে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল—এই প্রশিক্ষণমূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্বের বিভিন্ন পবিত্র গ্রন্থের বাণীর পাশাপাশি শ্রীমা সারদাদেবীর অমূল্য কথামৃতও অনুসৃত হয়েছে।
আমরা ধন্য—এই বাংলার, এই ভারতবর্ষের সন্তান হয়ে। কিন্তু আমরা কি সত্যিই সেই গৌরব ধারণ করতে পারছি?
তাই আজ দেশের সকল স্তরে—স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে—শ্রীমায়ের কথামৃত সশ্রদ্ধায় প্রয়োগ হওয়াই সময়ের দাবি।
শ্রীমায়ের পুণ্য আবির্ভাবের এই মুহূর্তে মনে পড়ে শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সেই বাণী—
“ও সারদা, সরস্বতী—জ্ঞান বিতরণ করতে এসেছে।”
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন—
“মা হলেন আমার সবচেয়ে বড় শিক্ষক। শুধু তাঁর কথাই অনুসরণ করলেই একজন সর্বাঙ্গসুন্দর মানুষ হওয়া যায়।”
মানবতাবোধে অনন্য, জ্ঞানদায়িনী শিক্ষিকা শ্রীশ্রী মা সারদাদেবীর সেই পথনির্দেশই হোক আমাদের আজকের ও আগামী দিনের প্রার্থনা।
মাগো—
“আমার মাথা নত করে দাও হে, তোমার চরণধুলার তলে।”