Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$ID is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 46

Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$post is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 47
বিশ্বপিতা তুমি হে প্রভু… - NewsOnly24

বিশ্বপিতা তুমি হে প্রভু…

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতার বা তার আশেপাশের ২৫শে ডিসেম্বর মানে বড়দিন তথা যীশুর জন্মদিনে অনেক আলোর রোশনাই,নানা সাইজের কেকের পসরা নিয়ে সাজানো দোকান, বাজার। এস্প্ল্যানেডের রাস্তায় সান্তা ক্লজের লাল টুপি,খ্রিসমাস ট্রি, জিঙ্গেল বেল, নানান ধরনের আলোর সরঞ্জাম কেনাবেচা, পার্ক স্ট্রিট আলোয় আলোয় ঝলমলানো, বড়দিনের মেজাজ নিয়ে এখানে ওখানে বেড়িয়ে পড়া,বেড়াতে যাওয়া, ইত্যাদি এসব তো আমাদের অতি পরিচিত। কিন্তু, কেমন থাকে এই বাংলার গ্রামগঞ্জ, মফস্বলের, প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই ২৫ শে ডিসেম্বর, বা তার আশেপাশের দিনগুলো?

আসলে,এই যীশু বা তার জন্মদিন মিলেমিশে গেছে আমাদের বাংলার চিরায়ত লোকায়ত সংস্কৃতিতে।যেমন মিশে আছে চড়ক,ঈদ,পয়লা বৈশাখ,নবান্ন,২৫ শে বৈশাখ, ২২ শে শ্রাবণ, ১১ ই জ্যেষ্ঠ, ইত্যাদি ইত্যাদি।

আর এই পাব্বনগুলোকে ঘিরে এই বাংলার মাটিতে সেই কবে থেকে রচিত হয়েছে মাটির গান,লোকগান।যেমন আগমনী গান,ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া,গম্ভীরা,টুসু,ঝুমুর,কীর্তন গান,ঠিক তেমনই রয়েছে বড়দিনের আগমনী গান। কৃষ্ণ-কীর্তনীয়াদের মতো খ্রীস্ট-কীর্তনীয়ারা বড়দিনের আগের রাতে যীশু-কীর্তন নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।

কলকাতার ২৪ শে ডিসেম্বরের রাতে যেমন দেখি চারিদিকে আলোকিত সুসজ্জিত পরিবেশ,সেই রকম সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, কাকদ্বীপে, বকখালিতে, গেঁওখালিতে, এই বাংলার জেলায় জেলায় এই ছবি দেখা যায়।

যীশু এদেশের,না অন্য কোনো দেশের, কিম্বা যীশু কালো না ধলো ছিল,তিনি কি আমাদের খেটে খাওয়া মানুষদের মতো না কি অন্য রকমের,এসব প্রশ্ন যাদের কাছে অবান্তর, তারা হলেন এই বাংলার কৃষিজীবী মানুষ, তারা হলেন এই বাংলার শ্রমজীবী মানুষ। এককথায় সাধারণ মানুষ। তাই যদি ২৪ শে ডিসেম্বরের সন্ধ্যায় বা রাতে এই বাংলার কোন গ্রাম গঞ্জে যাওয়া যায়,তাহলে দেখা যাবে,বড়দিনের খুশিতে যীশুকে নিজের আপনজন করে নিয়েছে এই বাংলার হিন্দু মুসলমান খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের খেটে খাওয়া মানুষ জন।

এপার বাংলার -ওপার বাংলার মধ্যিখানের জল ছলছলে সেতু ইছামতী নদীর দুই পাড়ে ঘরে ঘরে এই উৎসব পিঠেপুলি, দই-চিঁড়ে,বানানো কেকেতে একাকার। তারা বাঙালি, কিন্তু তাদের পদবি আন্তোনিও, গঞ্জালবেস,ডি কোস্টা,ইত্যাদি।কারও নাম আনোয়ারা, কারো নাম চামেলি,কারও নাম মকবুল,কারও নাম মোহন। ঠিক এমনই উৎসব হয় প্রায় শতবর্ষ প্রাচীন দক্ষিণবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলের বাসন্তীতে।সেখানে এই যীশু উৎসব মিলেমিশে যায় জন,জহিরুল,জনার্দন-দের জীবনে। ২৪শে ডিসেম্বরের বাতাসে গান ভেসে বেড়ায় –“প্রভু যীশুর চরণ ধরে ওরে ভোলামন//ওই চরণ না ভজিলে যে বৃথাই যাবে রে জীবন..”।আবার এই বাংলার উত্তরে আলিপুরদুয়ারে,এবং তার আশেপাশে যীশুর গীর্জার ময়দানে আনন্দে মেতে ওঠে ২৪শে ডিসেম্বরের সন্ধ্যায় মুণ্ডা,গারো,মেচো,রাভার,সাঁওতাল-রা একসাথে। সে এক অনির্বচনীয় দৃষ্টান্ত।

ওপার বাংলার চট্টগ্রাম থেকে এপার বাংলার আউশগ্রাম,সপ্তগ্রাম, যা ছিল এককালে অবিভক্ত বাংলা,আজ ভিন্ন ভিন্ন,কিন্তু যীশুবাবা-র জন্মদিনের উৎসব আনন্দ বাংলার নিজস্ব চিরায়ত লোকায়ত সংস্কৃতিতে একাকার হয়ে গেছে। একই চিত্র দেখা যায় আমাদের ভারতবর্ষের উত্তর থেকে দক্ষিণে, পূর্ব থেকে পশ্চিমে।

এই একাকার একাত্মতার এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত আমরা পাই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “শান্তিনিকেতন”-এ এই যীশুখ্রীস্ট সেই কবে থেকে হয়ে ওঠেন এক কেন্দ্রীয় চরিত্র ” খ্রীস্টৎসবে। কবিগুরু লিখলেন সেই গান–“তাই তোমার আনন্দ আমার ‘পর,/ তুমি তাই এসেছো নীচে,//আমায় নইলে ত্রিভুবনেশ্বর তোমার প্রেম হোত যে মিছে..”(২৫শে ডিসেম্বর, ১৯২৩ সাল)।

আজও শান্তিনিকেতনের আশ্রমে,স্বামী বিবেকানন্দের স্বপ্ন শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সমস্ত কেন্দ্রে,শ্রীশ্রী মায়ের মন্দিরে,পণ্ডিচেরীতে যীশুখ্রীস্ট আরাধিত হন,আপ্যায়িত হন। বাংলার সংস্কৃতির এক ঐতিহাসিক অঙ্গ এই যীশু আরাধনা। যা আজ বাংলার চিরায়ত লোকায়ত সংস্কৃতিতে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে গেছে।

আমাদের দেশের ঠিক এই সময়ের পরিস্থিতিতে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ যে বিষয়টি, সেটা হোল,যীশু বাংলায় এসে,এদেশে এসে,সে আমাদেরই একজন হয়ে গেছে।মাদার মেরী একাকার হয়ে গেছে আমাদের মা আমিনা,মা ফতেমা,মা সারদা,মা আনন্দময়ীর সাথে। সেখানে নেই কোনো সম্প্রদায়, নেই কোনো জাতপাতের দ্বিধাবোধ, দ্বন্দ্ব -বিদ্বেষ। শুধু সহিষ্ণুতা আর সম্প্রীতির আহ্বান থাকুক সেই মহামানবের শুভজন্মদিনের প্রার্থনায়।

রবীন্দ্রনাথ লিখছেন – “বড়োদিন নিজেকে পরীক্ষা করবার দিন,নিজেকে বিনম্র করবার দিন…।” (২৫ শে ডিসেম্বর, ১৯৩২ সাল)।

তাই আমাদের প্রার্থনা হোক–“বিশ্বপিতা তুমি হে প্রভু, আমাদের প্রার্থনা এই শুধু,/তোমারই করুণা হতে মোরা বঞ্চিত না হই কভু…”।

তমসো মা জ্যোতির্গময়..
অসতো মা সদগময়…
মৃত্যোর্মা অমৃতংগময়…
শান্তি..শান্তি..শান্তি…।।

Related posts

লোকসঙ্গীতের অনির্বাণ আলো আব্বাসউদ্দীন আহমদ: জন্মের ১২৫ বছরে ফিরে দেখা

বিহারের এনডিএ-র জয় তৃণমূলের উদ্বেগের কারণ হতে পারে?

জেদের জয়: ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের বিশ্বজয় নারীসত্তার সাহসিকতার প্রতীক