Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$ID is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 46

Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$post is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 47
মা-গো, তোমার চরণ ছুঁয়ে যাই… - NewsOnly24

মা-গো, তোমার চরণ ছুঁয়ে যাই…

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

১৯২০ সালের ২০ শে জুলাই,শ্রীমা সারদা তাঁর এই জগতের মানবলীলা সমাপ্ত করেছিলেন। জগতের সকল সন্তান হয়েছিল মা-হারা। কিন্তু মায়ের এই যাওয়া তো নয় যাওয়া।বরঞ্চ বলা যেতে পারে,শ্রীমাকে আরও অনেক অনেক বেশি করে আমাদের সুখে দুখে আমাদেরই জীবনের প্রতি পদক্ষেপে পাওয়া।

শ্রীরামকৃষ্ণ জানতেন,যে যুগপ্রয়োজন সাধনের জন্য ঠাকুরের মানবলীলা, তাঁর এই জগতের লীলাসঙ্গিনী সারদা দেবীর ভুমিকাও ঠাকুরের চেয়ে কোনো মতেই কম নয়,বরং বলা যায় বেশিই।

তখন ঠাকুর অসুস্থ।রয়েছেন কাশীপুরে। তখন তিনি মহাপ্রস্থানের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন,সেই সময়ে তিনি একদিন শ্রীমাকে কতকটা অনুযোগের সুরেই বলেছিলেন–“তুমি কি কিছু করবে না?(নিজেকে দেখিয়ে)এই সব করবে?” প্রত্তুত্বরে গ্রাম্যপল্লীবালা সারদা মা নারীসুলভ দ্বিধা আর লজ্জায় উত্তর দিয়েছিলেন–“আমি মেয়েমানুষ, আমি কি করতে পারি?” তৎক্ষনাৎ শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন-” না,না,তোমাকে অনেক কিছুই করতে হবে।”

আর একদিন শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবাবস্থায় নিজেকে দেখিয়ে শ্রীমা-কে বলেছিলেন–“এ আর কি করেছে? তোমাকে এর অনেক বেশি করতে হবে,জগতের জন্যে,মানুষের জন্যে..।” আবার অন্য সময়েও ঠাকুর বলেছেন– “শুধু কি আমারই দায়? তোমারও দায়।”

এই কথালাপ থেকেই অনুভব করা যায় যে ঠাকুর কি চোখে শ্রীমা-কে দেখিতেন। পরবর্তীতে শ্রীমা বলেছেন-“যখন ঠাকুর চলে গেলেন,আমারও ইচ্ছা হল আমিও চলে যাই। তিনি(শ্রীরামকৃষ্ণ) দেখা দিয়ে বললেন,” না, তুমি থাকো।অনেক কাজ বাকি আছে।” অবিশ্যি শেষে দেখলুম,তাই তো অনেক কাজ বাকি।” (সুত্র-শ্রীশ্রী মায়ের কথা,২য় ভাগ,পৃ-৯)।

শ্রীরামকৃষ্ণ রহস্য করে বলতেন-“ছাইচাপা বেরাল। নবতে যিনি রয়েছেন,তিনিই সব রে।” স্বামী বিবেকানন্দ গুরুভাইদের আমেরিকা থেকে লিখেছিলেন -“আমাদের মা-ঠাকুরন কি বস্তু বুঝতে পারনি,এখনও কেহই পারনা,ক্রমেই পারবে।”

স্বামী প্রেমানন্দ লিখেছেন-“শ্রীশ্রী মাকে কে বুঝেছে?…ঐশ্বর্যের লেশ নাই, ঠাকুরের বরং বিদ্যার ঐশ্বর্য ছিল;…কিন্তু মা-র–তাঁর ঐশ্বর্য পর্যন্ত লুপ্ত! এ কি মহাশক্তি!”

স্বামী সারদানন্দ শ্রীমায়ের সম্পর্কে তাঁর নিজের ধারণায় একটি গান তৈরী করে গাইতেন মাঝে মাঝে –“তোর অঙ্গ দেখে রঙ্গময়ী অবাক হয়েছি।/হাসিব কি কাঁদিব তাই বসে ভাবতেছি।/ বিচিত্র ভবের মেলা, ভাঙ্গো গড়ো দুটি বেলা/ ঠিক যেন ছেলেখেলা বুঝতে পেরেছি।/এতকাল রইলাম কাছে বেড়াইলাম পাছে পাছে/ চিনিতে না পেরে এখন হার মেনেছি।”(স্বামী সারদানন্দ ছিলেন শ্রীমায়ের সেবক সন্তান)। স্বামী শিবানন্দ বলেছেন-” মা কি সাধারণ ভাবে থাকতেন! আমরা শ্রীমা-কে কি বুঝব? একমাত্র ঠাকুরই মাকে ঠিক ঠিক জেনেছিলেন।”

স্বামী ব্রহ্মানন্দ বলেছেন -“মা-কে চেনা বড় শক্ত।ঘোমটা দিয়ে যেন সাধারণ মেয়েদের মতন থাকেন,অথচ মা সাক্ষাৎ জগদম্বা। ঠাকুর না চিনিয়ে দিলে আমরাই কি মাকে চিনতে পারতুম?”

এইসব তাত্ত্বিক,ইতিহাস আমাদের বলে দেয় আমাদের শ্রীমা সারদা কি ছিলেন আর তিনি ঠিকই আমাদের কথা দিয়ে গেছেন।…” আমি যেমন তেমন মা নই,আমি সত্যিকারের মা। যখন তোমার কেউ থাকবে না, জানবে তোমার মা আছে।” কি অমোঘ চিরন্তন শাশ্বত সত্য কথা। যা বিশ্বাসের,যা ভরসার,যা এই বিশ্বে প্রথম বলেছিলেন শ্রীশ্রী মা সারদা।

আমাদের সেই মায়ের তিরোধান উপলক্ষে আমরা নিবেদন করে গেলাম আমাদের বিনম্র প্রণাম,আর ভালোবাসা।

মা গো,তুমি যেমন ছিলে,তেমনই থেকো আমাদের জীবনে সদা সর্বদা চিরন্তন শাশ্বত সত্য হোয়ে।

তোমায় প্রণাম।

Related posts

আমাদের না হারানো ‘মানিক’ আমাদেরই ‘প্রবোধ’

অমরত্ব রয়ে গেল আপনার জন্য, ধর্মেন্দ্র সাহাব, সাত দশকের উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন

অলিখিত ইতিহাসের নীরব অধ্যায়ের একটি পৃষ্ঠা