Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$ID is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 46

Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$post is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 47
শিক্ষক দিবসে প্রণাম - NewsOnly24

শিক্ষক দিবসে প্রণাম

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

শিক্ষক দিবসে ঘরে বাইরে, অতীতের, আজকের, আগামীদিনের সকল মাস্টার মশাই, দিদিমণিদের শ্রদ্ধার বিনম্রতায় আজ এক পুরুষ সিংহ মাস্টার মশায়ের জীবনের এক চমকপ্রদ সত্য কাহিনির কথা উপস্থাপনা করবো।

অবিভক্ত বাংলায় অধ্যাপক গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলি তখন আজকের বাংলাদেশের রাজসাহী কলেজে ইংরাজি পড়ান। ছাত্রদের কাছে তিনি খুবই আপন ছিলেন। তার পড়ানো সকলেই মুগ্ধতার সাথে শুনতো।খুব দরদ দিয়ে তিনি পড়াতেন অধ্যাপক গাঙ্গুলি।

একদিন  ঐ কলেজের ইংরেজ প্রিন্সিপাল (অধ্যক্ষ) মহাশয়  কলেজের  করিডর দিয়ে যেতে যেতে দেখেন যে একটি ক্লাস একদম চুপচাপ।ক্লাসের দরজা,জানলা সব বন্ধ।শুধু একজনের কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে,যেন কিছু পড়াচ্ছেন। কৌতুহল বশতঃ তখনি অধ্যক্ষ মশাই আস্তে আস্তে বন্ধ জানলাতে কান পেতে শুনতে পেলেন যে অধ্যাপক গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলি ইংরাজি সাহিত্য পড়াচ্ছেন। উইলিয়াম শেক্সপিয়রের একটি কবিতা পড়াচ্ছেন গোপাল বাবু।

অধ্যক্ষ মশাই শুনলেন যে প্রফেসর গাঙ্গুলি সেই কবিতায় থাকা “strand…” কথাটির মানে তথা অন্তর্নিহিত   বিষয়টি ছাত্রদের ভালো করে বিভিন্নভাবে বোঝাচ্ছিলেন।

অধ্যাপক গাঙ্গুলির ইংরাজি সাহিত্যের এতো গভীর জ্ঞান এবং বুৎপত্তি এবং ছাত্রদের ওই রকম মোহিত হয়ে শোনা সেই অধ্যক্ষের ঠিক মনঃপুত হয়নি। তাই, তিনি ইছে করে অধ্যাপক গাঙ্গুলিকে অপদস্ত,হেয় করার জন্য ক্লাসের শেষে গাঙ্গুলি বাবুকে ডেকে তিরস্কার করে বললেন যে,তিনি(প্রফেসর গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলি) ছাত্রদের ভুল মানে বোঝাচ্ছিলেন। অধ্যাপক গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলি বলেনঃ…” স্যার, dictionary তে যে কথা লেখা আছে, তা আমার জানা,কিন্তু আমি ছেলেদের সেই অর্থই বোঝাচ্ছিলাম, যা ভেবে উইলিয়াম শেক্সপিয়র এই কবিতাটি লিখেছিলেন। ” এই বলে তিনি চলে যান।

পরের দিন অধ্যাপক গোপাল চন্দ্র যথারীতি কলেজে আসেন এবং দেখতে পান যে,কলেজের গেটে নোটিশ বোর্ডে একটি  নোটিশ ঝুলছে,তাতে লেখা ছিল”যাদের মাতৃভাষা ইংরাজি নয়,তাদের আজ থেকে আর ইংরাজি ক্লাস নিতে হবে না।”

অধ্যাপক গাঙ্গুলি বুঝতে পেরেছিলেন যে ওই নোটিশটি একমাত্র তাঁকে অপদস্ত করার জন্যই ব্রিটিশ অধ্যক্ষ মহাশয় নোটিশ বোর্ডে দিয়েছিলেন।  তাই সঙ্গে সঙ্গে অধ্যাপক গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলি পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে অধ্যাপনার চাকরি ছেড়ে দিয়ে পাঁচ পুত্র এবং স্ত্রীকে নিয়ে রাজসাহী থেকে সোজা তাঁর দেশের বাড়ি মানে গ্রামের বাড়ি নদীয়ার শান্তিপুরে চলে যান। সেখানেই তিনি চাষবাস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর এক ফাঁকে সমগ্র ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ জানিয়ে Oxford University  তে Oxford Dictionary publication Authority-কে একটি চিঠি দিয়েছিলেন।

এই ঘটনার প্রায় দেড় বছর পরে Oxford dictionary Authority -র পক্ষ থেকে অধ্যাপক গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলি  মহাশয়কে উত্তরে জানানো হয়,” আমরা অত্যন্ত আন্তরিক বিনম্রতায় জানাইতেছি যে,আপনার  পরামর্শ  এবং Strand শব্দের আপনার কৃত ব্যাখ্যা যথাযথ যথার্থ  এবং authority দ্বারা তাহা গৃহীত হয়েছে। অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আপনাকে জানানো যাইতেছে যে আমাদের new edition এ তা প্রকাশিত হবে।”

এই ঘটনার চার বছর পরে রাজসাহী কলেজের সেই অধ্যাপক অবসর গ্রহন করেন এবং পরে তিনি ইংল্যান্ডে নিজের বাড়িতে  ফিরে যান। তারপর বেশ কিছুদিন পরে ইংল্যান্ডের বাড়িতে বসে সেই ব্রিটিশ অধ্যক্ষ মহাশয়ের হটাৎ করে অধ্যাপক গাঙ্গুলির কথা মনে পড়তেই সেই “Strand” কথাটি মাথায় আসে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি Oxford Dictionary টা খুলে মানেটা দেখতে যান। দেখতে গিয়ে তিনি অবাক হয়ে দেখেন যে,অধ্যাপক গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলির নাম ” foot Note”–এ দেওয়া  রয়েছে,এবং শব্দটির যে ব্যাখ্যা সেদিন অধ্যাপক গাঙ্গুলি করেছিলেন সেটিও দেওয়া আছে।

তৎক্ষনাৎ অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ  মহাশয় সেই সময়ের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় (যিনি বাংলার বাঘ নামে বিশ্বখ্যাত)-কে চিঠি লিখলেনঃ..” রাজসাহী কলেজের অধ্যাপক গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলি  মহাশয়কে খুঁজে বার করে এক্ষুনি re-instate করতেই হবে কোনো একটি ভালো কলেজে। আর খোঁজ নিয়ে দেখা হোক এই চার বছর তিনি যদি কোন চাকরি  না করে থাকেন তাহলে তাকে compensation দিতে হবে। Fund-e টাকা না থাকলে  সেই টাকা আমি দিতে বাধ্য থাকিব…।”

স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় নদিয়ার শান্তিপুরে লোক পাঠিয়ে অধ্যাপক গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলিকে  নিজের কাছে এনে অবশেষে কটকের র‍্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলের পাশেই র‍্যাভেনশ কলেজের ইংরাজি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত করেন।

এখানে উল্লেখ্য যে,নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুকে ছাত্র হিসাবে প্রফেসর গাঙ্গুলি অত্যন্ত স্নেহ করতেন।কারন তার পাঁচ পুত্রই ছিলেন সুভাসচন্দ্র বসুর বন্ধু।

সে এক অনিন্দ্যসুন্দর ইতিহাস।যা জানলে শিক্ষক দিবসে শিক্ষা দাতা,শিক্ষা দাত্রীদের প্রতি বিনম্রতায় মাথা নত হয়ে যায়। সকলে ভালো থাকুন।

Related posts

লোকসঙ্গীতের অনির্বাণ আলো আব্বাসউদ্দীন আহমদ: জন্মের ১২৫ বছরে ফিরে দেখা

বিহারের এনডিএ-র জয় তৃণমূলের উদ্বেগের কারণ হতে পারে?

জেদের জয়: ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের বিশ্বজয় নারীসত্তার সাহসিকতার প্রতীক