ভ্যালেন্টাইন্স ডে: কিছু জানা-না জানা কথা

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

আজ থেকে ১০০ বছর আগে আমেরিকার একটি ব্যস্ত শহরে একটি মেয়ে (ফুল বিক্রেতা) বলেছিল, ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র আসল রহস্য হলো “রুটি আর গোলাপ…”। এইসময়ে বেশী বেশী করে গোলাপ বিক্রি হয়, আর তার ফলে সারা দুনিয়ায় যত গরীব, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ আছেন ফুল বিক্রেতা হিসাবে, তারা পেট ভরে রুটি খেতে পায়। এক কথায় পেট ভরে খেতে পায়। তাই জয় হোক ” ভ্যালেন্টাইন্স ডে “…।

ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র ইতিহাস নিয়ে অনেক কিংবদন্তি। যেমন,কেউ বলেন,প্রাচীন যুগে রোমান-রা এই ফেব্রুয়ারিতে ” লুপকারালিয়া” বা উর্ব্বরতার উৎসব পালন করতো। এই উৎসবের নিয়ম ছিল..সেখানকার পুরুষ এবং মহিলাদের দুটি আলাদা আলাদা বয়াম থেকে চিরকুট ( যার ভেতরে নাম লেখা থাকত) তুলে নিতে হোত,আর সেই চিরকুটে যার নাম লেখা থাকত,তার সঙ্গে জুটি বাঁধতে হতো।

আর একটি কিংবদন্তি ছিল,যে,প্রাচীন গ্রীসে এই সময়ে ভালোবাসার দেবী “গডেস হেরা” এবং সূর্য দেবতা “লর্ড জিউস”-এর বিয়ের অনুষ্ঠান পালন করা হোত…আর সেইটাই ছিল বাকি সকলের প্রেমের সময়কাল।

এছাড়াও অন্যান্য কিংবদন্তিগুলির মধ্যে একটি হলো যে প্রাচীন রোমে,সেখানকার শাসক সেনাবাহিনীর যুবকদের বিয়ের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে,কারন বিয়ে করলে স্ত্রীর প্রতি,সন্তানদের প্রতি মানসিকভাবে একটা আকর্ষণ তৈরী হবে,যার ফলে,সেইসব যুবকরা যুদ্ধে যাবার সময়ে পিছুটান দেখাবে,যুদ্ধে যেতে চাইবেনা,বা,যুদ্ধে গেলেও মনের মধ্যে পরিবারের কথা বারবার নাড়াচাড়া দেবে,এবং তাতে যুদ্ধ করার সময়ে একাগ্রতা বিঘ্নিত হবে,ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এটা তো মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি অবিচার। এই কথা বলে,সেখানকার রোমান ক্যাথলিক চার্চের একজন পাদ্রী সেণ্ট ভ্যালেন্টাইন গোপনে যুবক যুবতীদের ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দিয়ে বিয়ে দিতেন।পরে এই খবর রোম শাসকের কানে যায়,আর সেই শাসক আর তার সাগরেদরা এই ১৪ ই ফেব্রুয়ারী সেই সেণ্ট নিকোলাস ভ্যালেন্টাইন-এর প্রকাশ্য দিবালোকে এবং জনসমক্ষে শিরোচ্ছেদ করে। এই ঘটনায় রাগে শোকে বিদ্রোহ করে ওঠে সেখানকার মানুষ। শাসকরা পিছু হটে,বাতিল করতে বাধ্য হয় সেই অত্যাচারী নিয়ম।আর সেই থেকেই ১৪ ই ফেব্রুয়ারী “ভ্যালেন্টাইন ডে” হিসাবে পালিত হতে শুরু করে।

পরে ধীরে ধীরে এই উৎসব সারা বিশ্বে দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর কথায়..”প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে…”, বা, ” ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে…”।।

যুগ যুগ ধরে নারী-পুরুষের ভালোবাসার নকশীকাঁথা পাতা থাকে হৃদয়ের সবটুকু জুড়ে…মনে মনে গেয়ে ওঠে মানুষ এই ভ্যালেন্টাইন ডে-তে এবং ভালোবাসার প্রিয়জনের জন্য সারাটি জীবন…”আমার ভিতর বাহিরে,অন্তরে অন্তরে আছো তুমি,হৃদয় জুড়ে…” অথবা, ” তোমায় হৃদ-মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না…”

মানুষের ভালোবাসা চির আয়ুষ্মান হোক। গোলাপ দিবস (৭/২), দিবস (৮/২), চকলেট দিবস (৯/২), টেডি দিবস (১০/২), প্রতিশ্রুতি দিবস (১১/২), Hug/ বক্ষলগ্ন দিবস (১২/২), কিস্ দিবস (১৩/২), ভালোবাসা দিবস (১৪/২)… এই দিনগুলো সার্থক হোক, এই প্রার্থনা রেখে গেলাম,ভালোবাসায় নিবেদিত মানুষগুলির জন্য।

সকলে আনন্দে থাকুন, সকলকে আনন্দে রাখুন। আর আমাদের ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ুক অতি একান্ত প্রিয়জনের সাথে সাথে পরিবারের সকলের প্রতি, প্রতিবেশীদের প্রতি, এবং এই বিশ্বের যে মানুষগুলি অসহায়, অবলম্বনহীন, অভুক্ত, নিরাশ্রয়, তাদের সকলের প্রতি, এই হোক আজকের অঙ্গীকার। ভালোবাসার জয় হোক।

Related posts

‘মহিষাসুরমর্দিনী’- কিছু অজানা কথা

‘ইন্ডিয়া দ্যাট ইজ ভারত’, কিছু ঐতিহাসিক তথ্য

তিনিই ছিলেন একমাত্র “ঐক্যপুরুষ”