পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
প্রাচীন রোমে ১৪ ই ফেব্রুয়ারী ছিল রোমান দেবী জুনো-র সম্মানে ছুটির দিন,আর এই জুনো ছিলেন রোমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী ভালোবাসা বা প্রেমের দেবী। কারও কারও মতে ১৪ ই ফেব্রুয়ারী ভালোবাসার দিন হওয়ার কারন ছিল এটাই।
আবার, কারও মতে ২০০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস রোমের যোদ্ধা-যুবকদের বিয়ে করার ব্যাপারে,ভালোবাসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কারন তাহলে তাদের যুদ্ধে যেতে বা যুদ্ধ করতে অসুবিধা হবে। মন পড়ে থাকবে ভালোবাসার মানুষের দিকে,ইত্যাদি ইত্যাদি। সম্রাট ক্লডিয়াস-এর এই অন্যায় ঘোষণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এক যুবক, সেই যুবকের নাম ছিল নাকি ভ্যালেন্টাইন। অসম সাহসী এই যুবকের প্রতিবাদে প্রচন্ড ক্ষেপে যান সম্রাট ক্লডিয়াস। সম্রাট সেই যুবককে দেশদ্রোহিতার অপরাধে শাস্তি দেন মৃত্যুদন্ড। কথিত আছে,১৪ ই ফেব্রুয়ারী ভোররাত্রে সেই যুবকের মাথা কেটে ফেলা হয়। প্রেম-ভালোবাসার জন্য যুবক ভ্যালেন্টাইনের এই আত্মত্যাগের কথা স্মরণে রেখে তখন থেকেই দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসাবে পালন করা হয়।
আরও একটি মত প্রচলিত আছে, সেটা হোল, প্রাচীন রোমে ভ্যালেন্টাইন নামে একজন চিকিৎসক ছিলেন। তিনি অত্যন্ত সদাশয় মানুষ ছিলেন। অসুস্থ রোগীদের প্রতি তিনি ছিলেন অত্যন্ত দরদী এবং মানবিক। মানুষের মধ্যে তার জনপ্রিয়তাও ছিল খুব।মানুষ আসতো চিকিৎসা করাতে তার কাছে।
সেই সময়ে রোমে খ্রীস্টধর্ম মোটেই জনপ্রিয় ছিল না,বরং বলা যায় বিপরীত ছিল। এই ধর্মমতে বিশ্বাসীদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হত। ডাক্তার ভ্যালেন্টাইন ছিলেন খ্রিস্টান। এই পরিচয় কেউ জানতো না।খুব গোপন ছিল। যাইহোক, একদিন রোমের এক কারা-প্রধান তার অন্ধ সুন্দরী মেয়েকে ভ্যালেন্টাইনের কাছে নিয়ে এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য।যাতে মেয়েটি তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। ভ্যালেন্টাইন কথা দিয়েছিলেন যে তিনি সেই সুন্দরী অন্ধ মেয়েটির সাধ্যমতো চিকিৎসা করবেন। শুরুও করে দিলেন চিকিৎসা। মেয়েটির চোখও বেশ ধীরে ধীরে ভালো হয়ে উঠছিল। ইতিমধ্যে ভ্যালেন্টাইন এবং মেয়েটির মধ্যে এক গভীর নিবিড় গোপন ভালোবাসা জন্ম নিয়েছিল।
এমন সময়ে হঠাৎ একদিন রোমান সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইন-কে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল সম্রাটের কাছে। কারন, গুপ্তচরেরা সম্রাটকে খবর দিয়েছে যে ডাক্তার ভ্যালেন্টাইন একজন খ্রিস্টান, এবং সে একজন নিখাদ রোমান সুন্দরী নারীর প্রতি ভালোবাসায় নিবিষ্ট। ভ্যালেন্টাইন-কে কারাগারে বন্দী করা হয়।
সম্রাট ক্লডিয়াস ভ্যালেন্টাইন-এর মৃত্যুদন্ড দেন। ২৬৯ অথবা ২৭০ খ্রীস্টাব্দের ১৪ ই ফেব্রুয়ারী সেই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। এর আগে,কারাবন্দী থাকাকালীন ভ্যালেন্টাইন তার ভালোবাসার সেই অন্ধ সুন্দরী মেয়েটিকে চির বিদায় জানিয়ে একটি চিরকুট লিখে রেখে গিয়েছিলেন। তার হত্যার পরে কারা প্রধান সেই মেয়েটিকে চিরকুটটা দিয়েছিলেন। তাতে লেখা ছিল….” বিদায়, তোমার ভ্যালেন্টাইন..”( Bye, yours valentine..)। মেয়েটি সেই চিরকুট-এর ভেতরে বসন্তের ফুলের, বসন্তের সৌম্য সৌন্দর্য-এর এক আশ্চর্য সুন্দর রঙ দেখতে পেয়েছিল। কারন,সে তখন ভ্যালেন্টাইনের সুচিকিৎসার জন্য তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছিল।
ইতিহাসে প্রচলিত মত বিভিন্ন থাকলেও, ভালোবাসার কীর্তিকে সম্মান জানিয়ে ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ই ফেব্রুয়ারী পোপ জেলাসিয়ুস ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসাবে ঘোষণা করেন।
ভালোবাসার দিন তাই সেই থেকে ১৪ই ফেব্রুয়ারী।