Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$ID is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 46

Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$post is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 47
'এ কোন্ সকাল, রাতের চেয়েও অন্ধকার?' - NewsOnly24

‘এ কোন্ সকাল, রাতের চেয়েও অন্ধকার?’

ঠিক এই মুহূর্তের সময়টা খুব মন খারাপের সময়। খুব অস্থিরতার সময়। চারিদিক থেকে জড়িয়ে ধরছে একটা দমবন্ধ করা অস্বস্তিকর  অবস্থা। যে অবস্থাতে সামাজিক জীবনে,নাগরিক জীবনে সব সময়ে একটা অজানা,অচেনা আশঙ্কা,আতঙ্ক ঘুরেফিরে আসছে,যাচ্ছে। আমাদের জড়িয়ে ধরছে।

মানুষের মনের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার কূপমন্ডুকতা যেন এক আগ্রাসী মনোভাবকে প্রশ্রয় দিচ্ছে,সংক্রমিত করছে একে অন্যের বিরুদ্ধাচারণ করার প্ররোচনাকে।  যা আমাদের দেশের সংস্কৃতি নয়। যা আমাদের মানব সভ্যতার কৃষ্টি নয়।

“হিন্দু না ওরা মুসলিম, ঐ জিজ্ঞাসে কোন্ জন? কান্ডারী, বলো ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’-র”, কাজী নজরুল ইসলামের এই মহান বাণী কি আজ তাহলে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে? রবীন্দ্রনাথের সেই অমোঘ শাশ্বত আহ্বান–” আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া,/বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া।” এই আবাহন কি আজ আমাদের মনের,প্রাণের এক কথায় আমাদের সমস্ত সত্তায় বিরাজ করছে না? আমরা কি ভুলে যেতে পারি?

আমরা কি আজ পথভ্রষ্ট? আমাদের চিন্তা চেতনায় কি পচন ধরেছে? আমাদের মানবিকতার কি মরণ ঘটেছে? আপামর সাধারণ মানুষের মনের মধ্যে আজ এই এক কষ্ট, এই এক যন্ত্রনা,এই এক লজ্জা,এই এক জিজ্ঞাসা ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে। আমাদের নিজেদের কাছে “আমরা মানুষ”এই কথা বলতে,বা ভাবতে আমাদের আত্মলজ্জা,আত্মসংকট জন্ম নিচ্ছে। 

না আমরা চাইনা আমাদের জন্মভূমি, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলির সমস্ত শান্তিপ্রিয় মানুষ, আমরা চাইনা,শুধুমাত্র ধর্মের দোহাই দিয়ে অন্যের ধর্মকে আক্রমণ করতে,অন্য জাত-ধর্ম-এর মানুষকে আক্রমন করতে।আমাদের কাছে হিন্দু মুসলিম পরিচয়েরও আগে প্রথম আর শেষ পরিচয় হোল আমরা মানুষ। রাম রহিম একসাথেই তো এই পৃথিবীর মাটিতে জন্মেছি,এই পৃথিবীর আলোয় সব কিছুই চিনতে শিখেছি। রামের মা আর রহিমের মা/ আম্মি তো একই আগুনে চাল সেদ্ধ করে ভাত রান্না করেন।সেখানে কি আগুনের রঙ,চালের রঙ,ভাতের রঙ ভিন্ন ভিন্ন? আমাদের শরীর জুড়ে বহমান শিরায় শিরায় যে রক্ত ধমনীতে অবিরাম বয়ে চলেছে,তার রঙ তো একই–লাল। একই আকাশের চাঁদের আলোয় আমাদের কোজাগরী আর পবিত্র খুশীর ঈদ পালিত হয়।সেই খইসাদা জ্যোৎস্না আমরা গায়ে মাখি আনন্দে পরস্পর, রাম আর রহিম। একই রোদ্দুর রঙের কমলা আলোয় চাষের খেতে চাষ করি,পুকুর বিল,ঝিল,নদীতে মাছ ধরি,পাশাপাশি। 

মন্দিরে, দরগায় সকালে- বিকালে ধুপের সুবাস ঘুরে বেড়ায়।সন্ধ্যায় জ্বলে সন্ধ্যাপ্রদীপ। আজানের সুর মিশে যায় মঙ্গল শঙ্খের ধ্বনিতে ধ্বনিতে।

জীবনানন্দ দাশের সেই সম্প্রীতির অনিন্দ্যসুন্দর কবিতা মনে মনে উচ্চারণ করি,–” মহা মৈত্রীর বরদতীর্থে,পূণ্য ভারত-পুরে,/ পূজার ঘন্টা মিশিছে হরষে নামাজের সুরে সুরে.।”

আমাদের চোখের জলের রঙ এক,আমাদের খুশীর উচ্ছ্বাস এক,আমাদের রক্ত,ঘাম এক,আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস এক,এক আমাদের মান অভিমান,একই আমাদের পেটের খিদে, তবে কেন মিছে তর্ক বিবাদ মন্দিরে মসজিদে?

তাই আর যেন না হয় পহেলগাঁও, আর যেন না হয় এপার বাংলা,ওপার বাংলায় অসহায় কোনো সাধারণ মানুষের ওপরে ধর্মের কারনে কোনও রকমের আক্রমণ। সীমান্তে অসহিষ্ণুতার যেন জন্ম না হয়।ধর্ম পালন হোক যার যার তার তার ব্যক্তিগত বিশ্বাসে,তার ঘরে,তার অন্তরে, কিন্তু পর ধর্ম সহিংসতা নয় কোনও মতেই,চাই পরধর্ম-এর প্রতি পরম শ্রদ্ধা এবং সহিষ্ণুতা। তার কারণ,এক হাতে অস্ত্র,আর আরেক হাতে শাস্ত্র নিয়ে এই যে এখনকার সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনা সমুহ,এইসব ঘটনা আমাদের খুবই কষ্ট দেয়।আমাদের অস্তিত্বের সংকট নিয়ে এখন আমরা মুখোমুখি

তাই নিবেদন আমার আপনার পরিচিত আশেপাশের সবখানেই থাকুক আমাদের পারস্পরিক মেলবন্ধনের বিনিসুতোর সম্প্রীতির মালাখানি।

নিবেদনের শেষ প্রান্তে রেখে যাই সিরাজ সাঁই-কে:-” কে বড়ো, কে ছোট, বল তোরা বল তোরা বল্ তোরা, বল?/ আলির ওপর কালি? না কালির ওপর আলি?/ জলের ওপর পানি? না পানির ওপর জল? / কে বড়ো?  বল্ তোরা, বল্ তোরা বল্ তোরা, বল্?”

মুরশিদ সিরাজ সাঁইএর সুযোগ্য শিষ্য লালন সাঁইয়ের কথা না বললে কি চলে?–” জাত গেল জাত গেল বোলে,দেখি রে কি এ আজবখানা,/  তা নানা তা নানা,করে কেন জাতধম্মের হুজুগের হিড়িক টানা..?”

তাই বিনম্র নিবেদন, না আর যেন এক ফোঁটা রক্ত না ঝরে কোথাও।যেন আর কারো ঘর না আগুনে পুড়ে ছারখার হয়। আর যেন কোনও নারী বেইজ্জত হন। আর যেন মানুষের হাতে মানুষ খুন হয়।

ভালোবাসা বড্ড মূল্যবান অনুভব আমাদের হৃদয়ের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে। সেই ভালোবাসা দিয়ে আসুন সাজিয়ে তুলি আমাদের মহৎ হৃদয়খানি। ভালোবাসা দিয়ে ভালোবেসে যাই আমরা রাম-রহিম পরস্পর পরস্পরকে। এটাই আমাদের ঐতিহ্য, এটাই আমাদের পরম্পরা, এটাই আমাদের সংস্কৃতি, এটাই আমাদের দোয়া,এটাই আমাদের প্রার্থনা। 

সকলে ভালো  থাকুন।হিন্দু বুক পেতে দিয়ে রক্ষা করুক মুসলমানকে,মুসলমান বুক দিয়ে আগলে রাখুক হিন্দুকে।

এই হোক আজকের এই মুহূর্তের একমাত্র মানবিক,সামাজিক, রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা।

Related posts

লোকসঙ্গীতের অনির্বাণ আলো আব্বাসউদ্দীন আহমদ: জন্মের ১২৫ বছরে ফিরে দেখা

বিহারের এনডিএ-র জয় তৃণমূলের উদ্বেগের কারণ হতে পারে?

জেদের জয়: ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের বিশ্বজয় নারীসত্তার সাহসিকতার প্রতীক