প্রথম পাতা প্রবন্ধ দড়িতে মোম দেওয়া হয়নি কেন? ফাঁসির মঞ্চে শেষ প্রশ্ন ছিল শহিদ ক্ষুদিরামের

দড়িতে মোম দেওয়া হয়নি কেন? ফাঁসির মঞ্চে শেষ প্রশ্ন ছিল শহিদ ক্ষুদিরামের

1.3K views
A+A-
Reset

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়: তখনও পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রকাশিত হননি গান্ধীজি,নেহরু,নেতাজী, প্রমুখ ব্যক্তিত্বরা। সময়টা ১৯০০ শতকের একেবারে গোড়ার দিক। ব্রিটিশের অত্যাচার ভয়ঙ্করতম রূপে নেমে এসেছে এই দেশে, এই বাংলায়। বাংলা তখন ভারতবর্ষের রাজধানী। ব্রিটিশের অত্যাচার যত বেড়েছে,ততই এদেশের বুকে সংঘবদ্ধ হয়েছে দেশের স্বাধীনতার জন্য বৈপ্লবিক আন্দোলনের কর্মসূচী এবং তার প্রয়োগ। জন্ম নিয়েছে যুগান্তর গুপ্ত সমিতি,অনুশীলন সমিতি,প্রমুখ। নেতৃত্বে শ্রী অরবিন্দ ঘোষ,কৃষ্ণ কুমার মিত্র,প্রমুখরা।

ব্রিটিশ শাসকের অত্যাচার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে,তারই মধ্যে শুরু হোল এই বাংলাকে দু’টুকরো করার ষড়যন্ত্র।

১৯০২-০৩ সাল।বিপ্লবী নেতা শ্রী অরবিন্দ এবং সিস্টার নিবেদিতা গোপনে মিটিং করতে এসেছেন মেদিনীপুরে সেখানকার বিপ্লবী সমিতিগুলির সঙ্গে নানান বিষয়ে পরিকল্পনা হচ্ছে। সেখানেই সেই ছেলেটা এসেছিল সেই সভাতে তার স্কুলের মাস্টারমশাই, যিনি গোপনে বিপ্লবী দলের সাথেও যুক্ত, সেই সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নির্দেশে।

একটি ডানপিটে,রোমাঞ্চপ্রিয়,সাহসী ছেলে তার চোখ দুটি বড় বড় করে মন দিয়ে,অবাক হয়ে শুনছে দেশমাতৃকার কথাগুলি।

ছেলেটি ছোটবেলাতেই বাবাকে আর মাকে হারিয়েছিল।তার নাম ক্ষুদিরাম। মেদিনীপুরের কেশপুর থানার মোহবনী গ্রামে জন্ম ৩রা ডিসেম্বর,১৮৮৯ সালে। বাবার নাম ত্রৈলক্যনাথ বসু আর মায়ের নাম লক্ষীপ্রিয়া দেবী। লক্ষী দেবীর তিন মেয়ের পর ছেলে হয়েছিল,কিন্তু মারা যায়, পরপর তিন তিনবার। তখন রীতি অনুযায়ী লক্ষীদেবী তাঁর আবার পুত্র যখন হোল, তিনি তাকে তিনমুঠো খুদের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন তাঁর প্রথম কন্যা, যে ততদিনে বিবাহিতা, তার কাছে। খুদ দিয়ে শিশুটিকে কেনা হয়েছিল বলেই তার নাম হয় “ক্ষুদিরাম”। তাকে মা লক্ষী দেবীর কাছ থেকে কিনে নিয়ে মায়ের ভালবাসা দিয়ে লালন পালন করেন বড়দিদি অনুরূপা দেবী। যিনি তার স্বামী অমৃত লাল রায়ের সঙ্গে তখন মেদিনীপুর টাউনে বসবাদ করেন। ছোটভাই আদরের ক্ষুদিকে সন্তান স্নেহে নিজের সন্তান ললিতের সঙ্গে মানুষ করতে থাকেন। ফলে ললিত আর খুদি দুজনেই ছিল হরিহর আত্না।

সংগঠক হিসাবে ক্ষুদিরাম

ক্ষুদিরাম পরিণত হতে লাগলো দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এক অগ্নীহোত্রী-তে।

তারপরের ইতিহাস তো বহুজনশ্রুত। ১৯০৮ সালের ৩০ শে এপ্রিল বিহারের মজফফরপুরে রাত সাড়ে আটটায় ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে অত্যন্ত নৃশংস,অত্যাচারী বৃটিশ প্রশাসক(বিচারপতি),ডগলাস কিংসফোর্ডকে বোমা মেরে হত্যা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সামান্য ভুলের জন্য দুজন নিরীহ ব্রিটিশ মহিলা মিসেস কেনেডি এবং তার কন্যা বোমার আঘাতে মারা যায়। পরবর্তী সময়ে যখন এই ঘটনায় ক্ষুদিরাম গ্রেপ্তার হন, তখন তিনি ঐ মহিলাদের অনভিপ্রেত মৃত্যুর  জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন।

কে ছিলো এই অত্যাচারী কিংসফোর্ড?  আলিপুর প্রেসিডেন্সী বিচারালয়ের চিফ জাস্টিস হিসাবে ডগলাস কিংসফোর্ড সেই সময়ের বহু প্রচারিত “যুগান্তর” পত্রিকার সম্পাদক ভুপেন্দ্রনাথ দত্ত(স্বামী বিবেকানন্দের ছোট ভাই)-কে জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী আদর্শকে সমর্থন করে পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখার জন্য দোষী সাব্যস্ত করেন। শাস্তির রায় দেন এদেশ থেকে বিতাড়িত করার। শুধু তাই নয়,এই মামলার বিরুদ্ধে প্রচার করার জন্যে সুশীল সেন নামে একজন কিশোরকে একশত ঘা চাবুক মারার সাজা দেয় ঐ বিচারপতি ডগলাস কিংসফোর্ড। এছাড়াও এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সকল বিপ্লবীদের সম্মন্ধে অশ্লীল কটু কথা বলে তিনি ঐ সব দেশপ্রেমিকদের শারীরিক নির্যাতনের কঠোর শাস্তির কথা বলেন। তাই বিপ্লবীদের আক্রোশের মুখে পড়ে কিংসফোর্ড, তাকে চরম শাস্তি দেওয়ার পরিকল্পনা নেয় অনুশীলন সমিতি। সেই মোতাবেক ক্ষুদিরাম বসু আর তার এক সাথী প্রফুল্ল চাকী – এই দুই বিপ্লবীর ওপর কিংসফোর্ডকে উচিৎ শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। যদিও কিংসফোর্ডকে তখন বিহারের মজফফরপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে,যাতে বাংলার বিপ্লবীদের মুখে তাকে না পড়তে হয়। কিন্তু বাংলা আর বাঙালী ছাড়বার পাত্র নয়।

সেই ঐতিহাসিক ঘটনার পরে বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী নিজের মাথায় নিজেই গুলি চালিয়ে পুলিশের হাতে ধরা না দেওয়ার জন্য আত্মহত্যা করেন। কিন্তু ক্ষুদিরাম ব্রিটিশ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তারপর শুরু হয় বিচারের নামে এক প্রহসন।তখন ক্ষুদিরামের বয়স মাত্র ১৮ বছর ৮ মাস। বিহারের মজফফরপুর কোর্ট-এ বিচার হয়েছিল। বিচারপতি হিসাবে ছিল একজন ব্রিটিশ আর দু’জন ভারতীয়,তারা হলেন মিঃ কর্নডফ্ এবং মিঃ লাথুনীপ্রসাদ আর মিঃ জানকীপ্রসাদ।

যাইহোক,বিচারে ক্ষুদিরামের ফাঁসির রায় হয়। সেইদিন রায় ঘোষণার সময়ে ক্ষুদিরামের মুখে ছিল হাসি। আদালতের সকলে,এমন কী বিচারকেরাও তা দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন।তারা ভেবেছিলেন এই ছেলেটি কি ধাতুতে তৈরী? তাই বোধহয় বিচারক কর্নডফ্ অল্প বয়সী ক্ষুদিরাম-কে জিজ্ঞাসা করতে বাধ্য হয়েছিলেন, ফাঁসিতে তাকে মরতে হবে,এই ব্যাপারটি সে বুঝতে পেরেছে কি’না? ক্ষুদিরাম উত্তরে বলেছিলেন, হ্যাঁ সে সব বুঝতে পেরেছে।

স্বাধীনতার আকাঙ্খায় এমনই নির্ভীক ছিলেন মেদিনীপুর তথা এই বাংলার সেই ১৮ বছরের দামাল ছেলেটি সেদিন।

রবি-পাঠের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন

রায় ঘোষণার পরে জীবনের শেষ কয়েকটা দিন কারাগারের অন্তরালে বসে ক্ষুদিরাম পড়তে চেয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ,মাৎসিনি, গ্যারিবল্ডি,রবীন্দ্রনাথের লেখা  বই। ক্ষুদিরাম ফাঁসির আগেরদিন,১০ আগস্ট আইনজীবী সতীশচন্দ্র চক্রবর্তীকে বলেছিলেন “আমাদের দেশের রাজপুত রমনীরা যেমন নির্ভয়ে আগুনে ঝাঁপ দিয়া জহরব্রত পালন করিত,আমিও ঠিক তেমনই নির্ভয়ে দেশের জন্য প্রাণ দিব। আগামীকাল আমি ফাঁসির আগে চতুর্ভূজার প্রসাদ খাইয়া বধ্যভূমিতে যাইতে চাই।”

আর ফাঁসির আগে ক্ষুদিরামের শেষ ইচ্ছা কী ছিল জানেন? সেই অন্তিম সময়েও দেশের জন্য সশস্ত্র সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ারই স্বপ্ন-ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেছিলেন,”আমি যেন আবার জন্ম নিয়ে এই দেশে,এই বাংলায় আসি,আর আমি আবার যেন এই ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে প্রাণ দিতে পারি,যারা আমার দেশমাতৃকার অপমান করে,দেশের মানুষকে অত্যাচার করে,তাদের যেন মেরে তাড়াতে পারি। বন্দে মাতরম,বন্দে মাতরম,বন্দে মাতরম।”

বধ্যভূমিতে ফাঁসির মঞ্চে এসেও যে প্রশান্তি ক্ষুদিরামের মুখে,চোখে ছিল তা অত্যন্ত বিস্ময়কর লেগেছিল সেদিন সেখানে উপস্থিত সকলের। তা সে ব্রিটিশই হোক,বা,ভারতীয়ই হোক। এই কথা পরে লিখে গেছেন সেদিন সেইখানে উপস্থিত থাকা “বেঙ্গলি” পত্রিকার ( এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়) বিহারের করেসপন্ডেন্ট সাংবাদিক কালীপদ বসু। যিনিই প্রথম ক্ষুদিরামের ফাঁসির রায় এবং ফাঁসির আগে-পরের সমস্ত বিবরণ পাঠান কলকাতায় “বেঙ্গলি” পত্রিকা, ঢাকায় “জয়শ্রী” পত্রিকায় (অনিল রায় সম্পাদক) এবং কলকাতায় “সঞ্জীবনী” পত্রিকায় (সম্পাদকঃকৃষ্ণ কুমার মিত্র/শ্রী অরবিন্দের ছোট মেসোমশাই)। কালীপদ বসুর লেখা থেকে জানা যায় অনেক অজানা কথা।

১৯০৮ সালের ১১ ই আগস্ট বিহারের মজফফরপুর জেলের মধ্যে তৈরি করা হয়েছিল ১৫ ফুট উঁচু একটি ফাঁসীর মঞ্চ। দু’দিকে ছিল দু’টি শক্ত এবং মোটা শাল খুঁটি। তার ওপর আড়াআড়ি ভাবে বাঁধা ছিল একটি লোহার  লম্বা রড। সেই রডের মাঝখানে ছিল  খুব মোটা একগাছা কাছি দড়ি। আর তার শেষ প্রান্তে ছিল মরণ-ফাঁস।

ব্রিটিশ সরকারের চারজন বন্দুকধারী পুলিশ ক্ষুদিরাম-কে সেদিন নিয়ে এসেছিল সেই ফাঁসির মঞ্চে। নির্ভীক ক্ষুদিরাম বলিষ্ঠ পদক্ষেপে ছিল সকলের সামনে। আজও ভাবলে সারা গায়ে রোমাঞ্চ লাগে,সারা গায়ে কাঁটা দেয়, কারণ, সেদিন ফাঁসীর আগে উপস্থিত  আইনজীবীদের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসি হেসেছিলেন দেশজননীর আগুনের পাখী ক্ষুদিরাম বসু। তারপর,ক্ষুদিরামের দুটি হাত পিছমোড়া করে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। শেষে,তাঁর গলায় ফাঁসীর দড়ি পরানো মাত্রই ভারত তথা এই বাংলার অগ্নী-সূর্য সন্তান ক্ষুদিরাম জল্লাদকে প্রশ্ন করেছিলেন..”ফাঁসীর দড়িতে মোম দেওয়া হয়নি কেন?” একটু থেমে “বন্দে মাতরম” ব্যাস,এই ছিল বীর শহীদের শেষ কথা। সেদিন জল্লাদ বিস্ময়ে কিছু বলতে পারেনি। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশ জেল-সুপারিন্টেনডেন্ট সহ উপস্থিত সকলেই।

জেলের ভেতরে থাকাকালীন ফাঁসীর দু’দিন আগে ক্ষুদিরাম একটা পেনসিল আর কাগজ চেয়েছিলেন সাংবাদিক কালীপদ বাবুর কাছে,তিনি তা দিয়েওছিলেন ক্ষুদিরামকে। ক্ষুদিরাম লিখেছিলেন তার জীবনের কথা তার মাতৃসমা দিদি অপরূপা দেবীকে। সেই লেখা কালীপদবাবু পরে প্রকাশ করেন।

ক্ষুদিরামের নিথর দেহ ভোর ৪.৩০টের সময় ব্রিটিশের পুলিশের হাত থেকে নেন কালীপদ বাবু সহ চারজন ব্যক্তি। তার আগে গোপনে ওনারা একটি খাট তৈরি করে রেখেছিলেন,তার মাথার দিকে খোদাই করে লেখা ছিল  “বন্দে মাতরম”। ক্ষুদিরামের সেই পবিত্র দেহটিকে তাতে শোয়ানো হয়। তারপর তাতে ওনারা সঙ্গে নিয়ে আসা ফুল ছড়িয়ে দেন। শেষে সেই শায়িত ক্ষুদিরামকে নিয়ে বিরাট পুলিশ প্রহরায় তারা শ্মশানের দিকে রওনা দেন। চারিদিক থমথম করছে। ভোর তখন ৪.৪৫ মিনিট। হঠাৎ নামল ঝিরঝিরে বৃষ্টি, যেন সেদিন আকাশও কেঁদেছিল। জেলের চত্বর পেরোনোর পর ব্রিটিশের পুলিশরা চলে যায়।

হঠাৎ,দেখা যায় শেষ রাতের অন্ধকার চিরে ধীরে ধীরে পায়ে পায়ে শহীদ ক্ষুদিরামের সেই শেষযাত্রায় অগণিত মানুষ আপন মনে নীচুস্বরে শুধু ” বন্দে মাতরম” ধ্বনি দিতে দিতে এগোচ্ছে।কালীপদ বাবু লিখছেন, ” জানতে পারলাম, সেদিন সারা এলাকায় কারো ঘরে কোন রান্না হয়নি, কেউ স্নান করেনি, কোন ঘরে দিয়া জ্বালানো হয়নি। ব্রিটিশ পুলিশের ভয়ে আর তাদের প্রতি রাগে,ক্ষোভে,ঘৃণায় সেদিন তারা সমস্ত দোকান বাজার বন্ধ রেখে চুপিচুপি রাতের অন্ধকারে লুকিয়েছিল,ব্রিটিশের পুলিশরা চলে যেতে সবাই তাদের ‘পেয়ারে লাডলা’..’বীর পুত্তর’-এর শেষযাত্রায় সামিল হয়েছে। তাদের প্রাণের সব ভয় এখন ভেঙে গেছে, ভেঙে দিয়েছে তাদের ‘আপনা শের কা বেটা দুখী ভারত মাঈকা এক লওতে বেটা ক্ষুদিরাম”।

এরপর সারাদেশের তথা সারা বাংলার আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হতে শুরু হয়েছিল বাঁকুড়ার লালমাটির ভুমিপুত্র পীতাম্বর দাস বাউলের রচিত সেই কালজয়ী গান যা আজও ভারতবর্ষকে, এই বাংলাকে অনুপ্রাণিত করে, মনের মধ্যে কান্নার জন্ম দেয়”একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি,/হাসি হাসি পরবো ফাঁসী,দেখবে ভারতবাসী”

আজও এই সুর এই দেশের, এই মাটির কাছাকাছি নিয়ে আসে দেশপ্রেমের অনুভবকে শপথ নিতে শেখায় এ দেশের প্রতিটি নাগরিককে।  এদেশের প্রতিটি মানুষের মনে পাতা থাকে চিরকাল শহিদ ক্ষুদিরামের অমর বীরগাথার নকশীকাঁথা।

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.