চলচ্চিত্র আর সঙ্গীত—দুই জগতের দুই বর্ষীয়ান তারকা এক মঞ্চে। একদিকে বাংলা গানের কিংবদন্তি আরতি মুখোপাধ্যায়, অন্যদিকে বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা ও তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা। দু’জনকেই বঙ্গবিভূষণ সম্মানে ভূষিত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে।
বৃহস্পতিবার ধনধান্য অডিটোরিয়ামে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে ৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের (KIFF) উদ্বোধন করেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর উপস্থিতিতেই মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে দুই গুণী শিল্পীর হাতে রাজ্যের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘বঙ্গবিভূষণ’ তুলে দেন।
ষাটের দশক থেকে আজ পর্যন্ত বাংলা গানের ভুবনে এক অনন্য নাম আরতি মুখোপাধ্যায়। আধুনিক গান, চলচ্চিত্রের গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত—সব ধারাতেই তাঁর কণ্ঠ আজও শ্রোতাদের মন জয় করে চলেছে।
‘এই মোম জোছনায়’, ‘যদি আকাশ হত আঁখি’, ‘আমি মিস ক্যালকাটা’—এমন বহু কালজয়ী গানের নেপথ্য কণ্ঠ তিনি। মাধবী মুখোপাধ্যায়, শর্মিলা ঠাকুর, দেবশ্রী রায়, তনুজাদের মতো অভিনেত্রীদের পর্দার পেছনে তাঁরই কণ্ঠে প্রাণ পেয়েছে চরিত্র।
বঙ্গবিভূষণ সম্মান তুলে দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আরতিদি একটার পর একটা অমর গান উপহার দিয়েছেন। কিন্তু আমরা আগে কখনও তাঁকে যথাযথ সম্মান দিতে পারিনি। আজ তাঁর হাতে ‘মাটির দান’ তুলে দিতে পেরে আমরা সত্যিই গর্বিত।”
মঞ্চে আবেগাপ্লুত আরতি মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি খুব ভালোবেসে নিয়েছি। মমতা তুমি যেভাবে সবার পাশে থাকো, সেটাই অনুপ্রেরণা। তোমার হাত থেকে এই সম্মান নিতে গিয়ে চোখে জল এসে গিয়েছিল।”
‘খামোশ!’—এক সময়ের জনপ্রিয় সংলাপ। কিন্তু আজ তিনি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়, এবং বাংলার মানুষ তাঁকে জানেন আসানসোলের তৃণমূল সাংসদ হিসেবে।
শত্রুঘ্ন সিনহা, যিনি ১৯৮৭ সালে গৌতম ঘোষের ‘অন্তরজলী যাত্রা’ ছবিতে অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রপ্রেমীদের হৃদয় ছুঁয়েছিলেন,
তাঁর দীর্ঘ বলিউড ক্যারিয়ার এবং ভারতীয় সিনেমায় অবদানের জন্য এবার রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত হলেন।
সম্মান গ্রহণ করে তিনি বলেন, “গত পাঁচ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে আসছি। আজ বঙ্গবিভূষণ পেয়ে আমি অভিভূত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী—তাঁর আমন্ত্রণে আসা মানে শিল্পের প্রতি সম্মান।”
৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনা অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র ও সংগীত জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। উৎসব চলবে আগামী কয়েক দিন ধরে, যেখানে দেশ-বিদেশের একাধিক প্রখ্যাত সিনেমা প্রদর্শিত হবে।