দুর্গাপুজোর দিনে বাইরে বেরোতে চান, কিন্তু খুব দূরে নয়? সে ক্ষেত্রে কলকাতার কাছেই রয়েছে ইতিহাসের ছোঁয়ায় ভরপুর দুটি দর্শনীয় স্থান— পশ্চিম মেদিনীপুরের কুরুমবেড়া দুর্গ এবং মোগলমারি বৌদ্ধবিহার। গাড়ি নিয়ে একদিনে ঘুরে আসা যায় এই দুটি জায়গা।
কুরুমবেড়া দুর্গ
খড়্গপুর থেকে প্রায় ৩০ কিমি দূরে, গগনেশ্বর গ্রামে অবস্থিত কুরুমবেড়া দুর্গ। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের তত্ত্বাবধানে থাকা এই দুর্গের পরতে পরতে মিশে আছে ইতিহাস।
প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়ে ল্যাটেরাইট পাথরের খিলানসমৃদ্ধ দীর্ঘ বারান্দা, বিশাল উঠোন এবং মাঝখানে তিনটি গোলাকার গম্বুজ। রয়েছে একটি বেদিও। কাঠামোয় ওড়িশি স্থাপত্যের ছাপ স্পষ্ট।
ইতিহাসবিদদের মতে, এটি তৈরি হয়েছিল ওড়িশার রাজা গজপতি কপিলেন্দ্র দেবের আমলে (১৪৩৮-১৪৬৯)। আবার কেউ কেউ বলেন, আওরঙ্গজেবের আমলে নির্মিত। কারও মতে, মুসলিম সৈন্যদের নামাজের জন্যই তৈরি হয়েছিল এই স্মৃতিস্তম্ভ। দুর্গটিতে মন্দির-মসজিদ মিলিয়ে বৈচিত্র্যময় স্থাপত্যশৈলীর দেখা মেলে।
মোগলমারি বৌদ্ধবিহার
কুরুমবেড়া থেকে সড়কপথে প্রায় ২০ কিমি দূরে মোগলমারি। এখানকার বৌদ্ধবিহারকে বলা হয় পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধবিহার।
পুরাতত্ত্ববিদদের মতে, এটি নালন্দার সমসাময়িক। চীনা ভিক্ষু হিউ-এন-সাং তাঁর ভ্রমণকথায় এর উল্লেখ করেছিলেন। ২০০৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অশোক দত্তের উদ্যোগে প্রথম খননকার্যে উঠে আসে বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ। পরে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ফের খননকাজে উদ্ধার হয় একাধিক মূর্তি, পাত্র, সুগন্ধীর বোতলের অংশ এবং ৫৪ রকম নকশা করা ইট।
বৌদ্ধমূর্তি, মাটির নকশা করা পাত্র এবং নানান শিল্পকর্ম এখন মিউজ়িয়ামে সংরক্ষিত। তবে পুরাতন ভগ্নাবশেষ এখনও মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদের।
কীভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে কুরুমবেড়া দুর্গের দূরত্ব প্রায় ১৭১ কিমি। সময় লাগবে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বাগনান, পাঁশকুড়া, রতুলিয়া, বেলদা হয়ে গগনেশ্বর। কুকাই বাসস্ট্যান্ড থেকে বাঁ দিকে যেতে হয়।
কুরুমবেড়া থেকে মোগলমারি বৌদ্ধবিহারের দূরত্ব ২০ কিমি। বাহানা, সালাজপুর হয়ে পৌঁছতে সময় লাগবে ৪০-৪৫ মিনিট।
দিঘা, মন্দারমণি, মৌসুনি বা ঝাড়গ্রামের মতো পরিচিত জায়গা বাদ দিয়ে এ বার পুজোয় ঘুরে আসতে পারেন ইতিহাসের পথে। কুরুমবেড়া দুর্গ আর মোগলমারি বৌদ্ধবিহার একদিনের সফরে উপহার দেবে ইতিহাস, স্থাপত্য আর প্রকৃতির অনন্য মেলবন্ধন।