ডেস্ক: আগামীকাল থেকে ফের ৪ লক্ষ করে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। অগ্রাধিকার দেওয়া হবে ১২ বছর পর্যন্ত বয়সী বাচ্চার মায়েদের টিকাকরণে। নবান্নে এমনটাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দেশে টিকাকরণের শ্লথ গতি নিয়ে আবারও কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানায় নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২ কোটির মতো টিকার ডোজ দিয়েছি বাংলায়। ৩৩ লক্ষ ডোজ দেওয়া হয়েছে সুপার স্প্রেডার। গাড়ির চালক, সবজিওয়ালা থেকে মৎস্য ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ দিনে সংক্রমণ আরও কমিয়ে ফেলব। প্রতিদিন ৩ লক্ষ ডোজ দিয়েছি। ৭-৮দিন দেওয়া যায়নি। আমরা ৩ কোটি ডোজ চেয়েছিলাম। বেসরকারিকে ১ কোটি দিতাম। তাহলে অনেকটা কাজ হয়ে যেত।
কোভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন না পাওয়া নিয়ে কেন্দ্রকে নিশানায় নেন তিনি। কটাক্ষের সুরে বলেন, কোভ্যাক্সিন প্রধানমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত। মমতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কোভ্যাক্সিন নেওয়ার কথা বলেছিলেন। অনেক পড়ুয়া কোভ্যাক্সিন নিয়েছেন, কিন্তু বিদেশে যেতে পারছেন না। কোভ্যাক্সিনকে যাতে সারা পৃথিবী গ্রাহ্য করে, সেই দিকটি দেখুক কেন্দ্র।’এর পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, কেন্দ্র থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যাকসিন পেলে, বেসরকারি ক্ষেত্রগুলিকে বেশি ভ্যাকসিন দেওয়া যেত।
৩০ হাজার কোভিড শয্যা রয়েছে রাজ্যে। এখন সংক্রমণ কমায় অনেক শয্যাই ফাঁকা আছে। শিশুদের ভেন্টিলেটর ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি বাড়ানো হচ্ছে। শিশুদের জন্য ১৩০০ আইসিইউ করা হবে। ২৫০টি মাইক্রো কনটেনমেন্ট জোন। সেখানে টিকাকরণে জোর দেওয়া হচ্ছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হচ্ছে সুপার স্প্রেডারদের। তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। ১২ বছর পর্যন্ত বয়সের শিশুর মায়েদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। নির্বাচন শুরুর সময় সংক্রমণ হার ৩ শতাংশ ছিল। সেটাই ৮ দফার নির্বাচনের পর ৩২ শতাংশে চলে গিয়েছিল। বিধিনিষেধের জেরে নিয়ন্ত্রণে এসেছে সংক্রমণ হার।
উপনির্বাচন
উপনির্বাচন যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব করা উচিত। ৭ দিন সময়ে করতে পারে তারা। মুর্শিদাবাদের ২টি আসনে নির্বাচন বাকি। আমরা অপেক্ষা করছি। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলে উপনির্বাচন ঘোষণা হতে পারে বলে শুনছি। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তৃতীয় ঢেউ এলে আর করা যাবে না। পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, গত বিধানসভা নির্বাচন আটদফা করাতেই করোনার সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল।
আরও পড়ুন: পিছিয়ে গেল রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা, ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাউন্সেলিং শেষ
বিজেপিকে আক্রমণ
অ-বিজেপি দলগুলি টিকাকরণ নিয়ে রাজনীতি করছে। সম্প্রতি বিরোধী দলগুলিকে বিঁধে এমনই অভিযোগ করেছিলেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। পালটা দিয়ে বুধবার মমতা বলেন, “ওঁ কি বাস্তবের সঙ্গে ওয়াকিবহাল? ওঁদের ব্যর্থতার জন্যই দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়েছে। শুধুই পশ্চিমবঙ্গ ভোটে বিজেপি মন দিয়েছিল। প্রস্তুতি নেওয়ারও সময় দেওয়া হয়নি। বিরোধীরা কেন রোগ নিয়ে খেলতে যাবে! বিজেপিই দেশের বড় অসুখ। তারা মানুষের রায় স্বীকার করতে পারছে না। সাধারণ মানুষের দাবি মানতে পারছে না। দ্বিতীয় ঢেউয়ে বহু মৃত্যু হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে বহু লোক মারা গিয়েছে। সেই দেহ ভেসে আসছে বাংলায়।
আলাপন ইস্যু
কেন্দ্রের পক্ষ থেকে প্রাক্তন মুখ্যসচিবকে চিঠি দেওয়ার প্রসঙ্গে সুর চড়ালেন মমতা। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সৎ অফিসার। সারা জীবন দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছেন। সরকার সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে আলাপনকে। সারা জীবন দেশের জন্য কাজ করেছেন। এটা দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ। আমরা লড়াই করব। ইচ্ছে করে করছে কেন্দ্র। কোনও আইন মানছে না। গায়ের জোরে কেউ যদি ভাবে আমি সেলফিস জায়েন্ট হব! গায়ের জোরে তো আইন চলে না। দেশটা বিজেপির নয়। রাজীব গান্ধীর ৪০০ আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল, তাও এমন করেননি। গায়ের জোরে নিয়ম হয় না। সংবিধান আছে দেশে। যা ইচ্ছা গায়ের জোরে করা যায় না। হাত তুলে ধ্বনি ভোটে পাশ করিয়ে দিল, এটা হয় না।