কলকাতা: রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছেন এক মহিলা। ঠিক কী অভিযোগ তুলেছেন তিনি? রাজভবনের তরফে কী জানানো হয়েছে? থানায় অভিযোগ দায়েরের পর কী পদক্ষেপ করতে পারে পুলিশ?
কী অভিযোগ করেছেন মহিলা
কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মহিলা যে অভিযোগ করেছেন তা অনুসারে, ২০১৯ সাল থেকে রাজভবনের অস্থায়ী কর্মী হিসাবে কাজ করছেন ওই মহিলা। জেলার বাসিন্দা ওই মহিলা থাকতেন রাজভবনের কর্মীদের হস্টেলে। সম্প্রতি তাঁকে একটি বিশেষ কাজের দায়িত্ব দেন রাজ্যপাল। গত ১৯ এপ্রিল তাঁকে বায়ো ডেটা নিয়ে রাজভবনে নিজের দফতরে দেখা করতে বলেন সিভি আনন্দ বোস। ২৪ এপ্রিল বেলা সওয়া বারোটা নাগাদ বায়ো ডেটা নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন ওই মহিলা। সেখানে রাজ্যপাল তাঁকে বলেন, তাঁর অস্থায়ী চাকরি স্থায়ী হয়ে যাবে। মহিলাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ব্যবস্থা করবেন তিনি। একথা বলে রাজ্যপাল মহিলার সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন বলে অভিযোগ। তাঁকে কুপ্রস্তাব দেন ও শ্লীলতাহানি করেন। এই ঘটনার পর রাজ্যপালের দফতর ছেড়ে বেরিয়ে যান মহিলা। কাউকে এব্যাপারে কোনও কথা বলেননি তিনি।
মহিলার অভিযোগ, বৃহস্পতিবার তাঁকে আবার নিজের দফতরে ডেকে পাঠান রাজ্যপাল। কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতা ভালো না হওয়ায় এদিন দফতরের সুপারভাইজারকে নিয়ে রাজ্যপালের কাছে যান তিনি। দফতরে ঢুকতেই সুপারভাইজারকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন সিভি আনন্দ বোস। এর পর ফের তাঁকে কুপ্রস্তাব দেন রাজ্যপাল। তাঁর শ্লীলতাহানি করেন। দ্বিতীয়বার শ্লীলতাহানির মুখে পড়ে রাজভবন থেকে ছুটে বেরিয়ে আসেন মহিলা। সরাসরি চলে যান পুলিশ ফাঁড়িতে। এর পর তাঁকে হেয়ার স্ট্রিট থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
অভিযোগ অস্বীকার রাজ্যপালের
শ্লীলতাহানির অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিবৃতি দিয়েছেন রাজ্যপাল বোস। তিনি এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলের পোস্টে লিখেছেন, ‘‘সত্যের জয় হবেই। কৌশলী কোনও আখ্যানের সামনে আমি মাথা নত করতে রাজি নই। যদি আমার বদনাম করে কেউ ভোটে ফায়দা তুলতে চান, ঈশ্বর তাঁদের মঙ্গল করুন। কিন্তু তাঁরা বাংলায় দুর্নীতি এবং হিংসার বিরুদ্ধে আমার লড়াই থামাতে পারবেন না।’’
পুলিশ কী করতে পারে?
ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, সংবিধানের ৩৬১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে পদাসীন কোনও রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলা করা যায় না বলে জানা যাচ্ছে। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত বা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করা যায় না।
সূত্রে খবর, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে রাষ্ট্রপতির মুখাপেক্ষী হতে চলেছে তারা। গোটা ঘটনার তদন্ত করে রাষ্ট্রপতিকে একটি রিপোর্ট পাঠাবে কলকাতা পুলিশ। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে রাষ্ট্রপতির কাছে অনুমোদন চাইবে তারা। তবে এব্যাপারে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ভাবনাও রয়েছে পুলিশকর্তাদের একাংশের মধ্যে। এব্যাপারে আইনজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলছেন তাঁরা।