অসমে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করতে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিল হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার। সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভায় ‘বহুবিবাহ প্রতিরোধ বিল’ (Assam Prohibition of Polygamy Bill) পাশ হয়ে গেল। প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়েছে, বহুবিবাহ করলে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। পাশাপাশি, বহুবিবাহের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মহিলাদের আর্থিক সুরক্ষার জন্য বিশেষ তহবিল গঠনেরও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, “এই বিলের মাধ্যমে রাজ্যে বহুবিবাহ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হবে। আইনি ভাবে বিবাহবিচ্ছেদ না হলে নতুন করে বিয়ে করা যাবে না। এটি শুধু একটি সামাজিক সংস্কার নয়, নারীর সুরক্ষা ও ন্যায়বিচারের দিক থেকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।”
বিলে যা যা বলা হয়েছে:
- একাধিক বিয়ে করলে সর্বোচ্চ ৭ বছরের জেল ও জরিমানার ব্যবস্থা।
- বিবাহবিচ্ছেদ আইনিভাবে সম্পন্ন না হলে নতুন করে বিয়ে করলে সেটি অপরাধ বলে গণ্য হবে।
- বহুবিবাহে ক্ষতিগ্রস্ত মহিলাদের জন্য আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠনের প্রস্তাব।
- বহুবিবাহে জড়িত সরকারি আধিকারিক বা ধর্মগুরুদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
- কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকবে—তফসিলি জাতি ও ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত এলাকা (বড়োল্যান্ড, ডিমা হাসাও, কারবি আংলং) এই আইনের আওতার বাইরে থাকবে।
হিমন্ত বলেন, “অসমে বহুবিবাহের কারণে বহু মহিলা আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই বিল নারীদের সুরক্ষা ও মর্যাদা রক্ষার পথে এক বড় পদক্ষেপ। আমরা চাই, সমাজে সমতা ও সম্মানের পরিবেশ গড়ে উঠুক।”
তিনি আরও জানান, এই বিল আগামী ২৫ নভেম্বর বিধানসভায় পেশ করা হবে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়ার পরেই সেটি আইন আকারে কার্যকর করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে হিমন্ত সরকারের এই পদক্ষেপ একটি বড় রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে। লাভ জেহাদ, বহুবিবাহ এবং বৈষ্ণব সত্রগুলির সুরক্ষা—এই তিনটি ইস্যু নিয়েই বিজেপি সরকার রাজ্যে নতুন দিকনির্দেশ তৈরি করতে চাইছে।
গত মাসেই সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, “লাভ জেহাদ, বহুগামিতা ও বৈষ্ণব সত্রের সুরক্ষা—এই তিনটি বিষয়েই ঐতিহাসিক আইন আনবে আমার সরকার।” তারই অংশ হিসেবে প্রথমেই বহুবিবাহ প্রতিরোধ বিল মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেল।