অপারেশন সিঁদুর: সাংবাদিক বৈঠকে দুই মহিলা সামরিক অফিসার, কে এই ব্যোমিকা সিং ও সোফিয়া কুরেশি?

‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আজকের সরকারি ব্রিফিংয়ে বিশেষ দৃষ্টান্ত স্থাপন করল ভারত, যেখানে প্রথম সারিতে ছিলেন দুই মহিলা সেনা অফিসার—এয়ারফোর্সের উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং এবং আর্মির কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। তাঁরা মঙ্গলবার রাতের সেই প্রিসিশন স্ট্রাইকের বিস্তারিত তুলে ধরেন, যা পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে চালানো হয়েছিল ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হামলার বদলা হিসেবে, যেখানে ২৬ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছিলেন।

‘অপারেশন সিঁদুর’ নামটিও একটি বার্তা—সেই সমস্ত নারীদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা, যারা সন্ত্রাসবাদে স্বামীকে হারিয়েছেন। এই নামের পাশাপাশি দুই মহিলা অফিসারকে মুখ্য ভূমিকায় আনার সিদ্ধান্তকে অনেকেই দেখছেন একটি শক্তিশালী ও অর্থবহ পদক্ষেপ হিসেবে।

ব্রিফিংয়ে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি বলেন, “বিশ্বস্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গি ঘাঁটিগুলি বেছে নেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানের কোনও সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করা হয়নি।” তিনি জানান, এই অভিযানে মোট ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে।

উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং জানান, “ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী প্রচণ্ড সংযম দেখিয়েছে। তবে পাকিস্তান যদি উত্তেজনা বাড়াতে কোনও দুঃসাহসিকতা করে, তবে তার উপযুক্ত জবাব দিতে ভারত সম্পূর্ণ প্রস্তুত।”

কে এই ব্যোমিকা সিং ও সোফিয়া কুরেশি?

উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং ভারতীয় বায়ুসেনার এক অভিজ্ঞ হেলিকপ্টার পাইলট। ন্যাশনাল ক্যাডেট কর্পসে (NCC) যোগ দিয়ে নিজের যাত্রা শুরু করেন তিনি। এরপর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করে ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর ফ্লাইং ব্রাঞ্চে স্থায়ী কমিশনে যোগ দেন। জম্মু-কাশ্মীর এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের উচ্চভূমিতে ‘চেতক’ ও ‘চিতা’ হেলিকপ্টার ওড়ানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। বহু রেসকিউ মিশনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।

কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ভারতীয় সেনার কর্পস অফ সিগন্যালস-এর একজন বরণীয় অফিসার। তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা অফিসার, যিনি একটি বহুজাতিক সামরিক মহড়ায় ভারতীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেই মহড়াটি হয়েছিল পুণেতে এবং এটি ছিল ভারতের মাটিতে আয়োজিত বৃহত্তম বিদেশি সামরিক মহড়াগুলির একটি।

অপারেশন সিঁদুরে কী ঘটেছিল?

পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মোট ৯টি স্থানে—মুজাফ্‌ফরাবাদ, কোটলি, বহাওয়ালপুর, রাওয়ালকোট, চাকসোয়ারি, ভিম্বর, নীলম ভ্যালি, ঝেলাম ও চাকওয়া—ভারতীয় বাহিনী মোট ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। অপারেশন শুরু হয় রাত ১টা ৫ মিনিটে এবং চলে মাত্র ২৫ মিনিট।

হ্যামার বোমা ও স্ক্যাল্প মিসাইলের মতো স্ট্যান্ড-অফ মিউনিশন ব্যবহার করে এই সব স্ট্রাইক চালানো হয়, যেগুলি আকাশে ভেসে থেকে লক্ষ্য নিশ্চিত করে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। হামলা এমনভাবে সময় মিলিয়ে চালানো হয়েছিল যাতে প্রতিরোধের সম্ভাবনা কম থাকে এবং ধ্বংস সর্বাধিক হয়।

সরকারের বক্তব্য, এই হামলা শুধু সামরিক প্রতিক্রিয়া নয়, বরং ভারতের কৌশলগত সংকল্পের প্রকাশ। তারা জানিয়েছে, “এই হামলা ছিল পরিমিত, দায়িত্বপূর্ণ ও উত্তেজনাহীন প্রতিক্রিয়া, যা দেখিয়ে দিল ভারত আর সীমান্তপারে সন্ত্রাস মেনে নেবে না।”

পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান এলওসি বরাবর নির্বিচারে গোলাবর্ষণ শুরু করে, যার ফলে জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চ সেক্টরে ১০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। মৃতদের মধ্যে রয়েছে একটি ১২ বছরের মেয়ে ও ১০ বছরের এক ছেলে।

Related posts

পুজোয় নিম্নচাপের ভ্রুকুটি, কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে দু’দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস

ফাইনালের আগে সুপার ওভার থ্রিলারে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে রিয়েলিটি চেক পেল ভারত, চিন্তা বোলিং নিয়ে

পুজোর ভিড় সামলাতে শিয়ালদহে বিশেষ ব্যবস্থা, চালু হচ্ছে ৩১টি স্পেশাল ট্রেন