দিল্লির মসনদ হারালেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ২৭ বছর পর রাজধানীতে ফের গেরুয়া ঝড় তুলে ক্ষমতায় ফিরল বিজেপি। কী কারণে এত বড় ধাক্কা খেল আম আদমি পার্টি (আপ)? বিশ্লেষকদের মতে, একাধিক কারণ একসঙ্গে কাজ করেছে এই নির্বাচনে।
আবগারি দুর্নীতির ছায়া
দিল্লির রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু ছিল আবগারি দুর্নীতি। যদিও এখনও কোনও অভিযোগ প্রমাণ হয়নি, তবু এই কেলেঙ্কারির কারণে কেজরিওয়াল-সহ আপের একাধিক হেভিওয়েট নেতা দীর্ঘদিন জেলে কাটিয়েছেন। প্রশাসনে এর ফলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, যা দিল্লির মানুষের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। স্বচ্ছ রাজনীতির প্রতীক হিসেবে পরিচিত কেজরিওয়ালের ভাবমূর্তিও এতে ধাক্কা খায়।
‘শিশ মহল’-এর বিতর্ক
কেজরিওয়ালের প্রাথমিক ইউএসপি ছিল আমজনতার মতো জীবনযাপন। কিন্তু ৩৫ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি তাঁর নতুন সরকারি বাসভবন—যাকে বিজেপি ‘শিশ মহল’ বলে প্রচার করেছে—সেই ভাবমূর্তিতে বড় আঘাত হানে। বিরোধীরা এই ইস্যুতে লাগাতার প্রচার চালিয়ে কেজরির ‘সাধারণ মানুষ’-এর ভাবমূর্তি নষ্ট করে দিতে সফল হয়েছে।
প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া
দিল্লিতে ১২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর কেজরিওয়াল সরকারকে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী মনোভাবের মুখোমুখি হতে হয়েছে। সরকারি পরিষেবাগুলির মান পড়ে যাওয়া, পরিকাঠামোগত সমস্যা এবং খয়রাতি নীতির অতিনির্ভরতা—সব মিলিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। সরকারি স্কুল ও মহল্লা ক্লিনিক নিয়েও অসন্তোষ ছিল মধ্যবিত্তদের মধ্যে।
ভোট কাটাকাটি
আপের বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ কংগ্রেসের ভোট ভাগ করে নেওয়া। এবারের নির্বাচনে কংগ্রেসের ভোট ৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা আপের জন্য বড় ধাক্কা। বেশ কয়েকটি আসনে বিজেপির জয় ও আপের পরাজয়ের ব্যবধান কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের সমান, যা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে কংগ্রেস ‘ভোট কাটুয়া’ হিসেবে কাজ করেছে।
যমুনার দূষণ ও পরিকাঠামোগত সমস্যা
ভোটের ঠিক আগে যমুনার দূষণ এবং পরিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব দিল্লির সাধারণ মানুষের মধ্যে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। সেই সঙ্গে প্রতিবছর দিল্লির বায়ুদূষণ জনজীবন দুর্বিষহ করে তুললেও, সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে পারেননি কেজরিওয়াল। এসব কারণেই শহরের মধ্যবিত্তরা আপের ওপর আস্থা হারায়।
অন্যান্য কারণ
বিজেপির নির্বাচনী প্রচারে জাতিগত সমীকরণের হিসাব, মধ্যবিত্তদের জন্য কেন্দ্রীয় বাজেটে করছাড়, এবং কেজরিওয়ালের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসও এই নির্বাচনে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সব মিলিয়ে, দিল্লির রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল। আপের এই পরাজয় কি সাময়িক, নাকি দীর্ঘমেয়াদি—সেটাই দেখার বিষয়!