বহুদিনের জল্পনার অবসান। অবশেষে বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিলেন গোপাল শেঠ। বুধবার দুপুরে পুরসভায় আস্থাভোট হওয়ার কথা ছিল, তবে তার আগেই তিনি পদত্যাগ করে দেন। ইমেলের মাধ্যমে পুরসভার এগ্জ়িকিউটিভ অফিসারের কাছে পাঠানো পদত্যাগপত্রে তিনি স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন—তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর নির্দেশেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গত কয়েক মাস ধরেই গোপালকে ঘিরে তৃণমূলের অন্দরে ক্ষোভ জমছিল। পুরসভার পরিষেবা নিয়ে বনগাঁবাসীর অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। জলনিকাশি, রাস্তা মেরামত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা—বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে কাজের গতি ও মান নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন স্থানীয় মানুষ। সেই অসন্তোষ পৌঁছে যায় কাউন্সিলরদের মধ্যেও, এবং ধীরে ধীরে গোপালের বিরুদ্ধে দলীয় পরিবেশ সম্পূর্ণ প্রতিকূল হয়ে ওঠে।
এই পরিস্থিতিতে গত ৬ নভেম্বর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সরাসরি হস্তক্ষেপ করে গোপালকে চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিতে নির্দেশ দেয়। তাঁকে সাত দিনের সময়সীমাও দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও পদ না ছেড়ে গোপাল বরং ছুটিতে চলে যান। তাঁর এই ভঙ্গিমায় ক্ষুব্ধ হয় সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল। কেন দলের নির্দেশ অমান্য করলেন—এই মর্মে নোটিস পাঠানো হয় গোপালের কাছে।
তবুও অবস্থানে অনড় থাকায় ক্ষোভ আরও তীব্র হয়। ১৯ নভেম্বর বনগাঁ পুরসভার ন’জন কাউন্সিলর গোপালের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অনাস্থা আনেন। এরপরও তিনি পদত্যাগ না করায় গত রবিবার তিন কাউন্সিলর আস্থাভোটের ডাক দেন। বুধবারই সেই আস্থাভোট হওয়ার কথা ছিল। তবে অনাস্থার আভাস এবং দলের কঠোর অবস্থান বুঝেই শেষমেশ ভোটের আগে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন গোপাল।
তাঁর ইস্তফা সামনে আসতেই বনগাঁ জেলা তৃণমূল শিবিরে খুশির জোয়ার দেখা যায়। বহু কর্মী-সমর্থককে আতশবাজি ফাটিয়ে উল্লাস করতে দেখা যায়। দলীয় নেতাদের দাবি, দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা কাটিয়ে পুরসভায় এখন নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে উন্নয়ন-কাজ ফের গতি পাবে।
গোপাল শেঠের পদত্যাগের পর এখন নজর নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচনের দিকে। তৃণমূলের স্থানীয় এবং জেলা নেতৃত্ব এই বিষয়ে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।