ব্রিগেডে ‘৫ লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ’ অনুষ্ঠানে প্যাটিস বিক্রি করতে যাওয়া দুই খাদ্যবিক্রেতাকে মারধর ও হেনস্তার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরে জনসভা থেকে তিনি বলেন, “সবকটাকে গ্রেপ্তার করেছি। এটা বাংলা, উত্তরপ্রদেশ নয়।” একইসঙ্গে সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা দিয়ে তিনি আরও মন্তব্য করেন, “গীতাপাঠ তো আমরা সকলেই বাড়িতে করি। পাবলিক মিটিং করার কী দরকার? দুর্গাপুজো তো মিলেমিশে করি। আপনারা কে যে ভেদাভেদ করছেন? আমি সব ধর্মকে নিয়ে চলতে চাই। নতুন ধর্ম আমদানি করেছেন।”
ঘটনা ঘটে গত রবিবার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে, যেখানে আরএসএস-ঘনিষ্ঠ সনাতন সংস্কৃতি সংসদ আয়োজন করেছিল ‘৫ লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ’-এর অনুষ্ঠান। ওইদিন সেখানে চিকেন প্যাটিস বিক্রি করতে গিয়েছিলেন আরামবাগের বাসিন্দা শেখ রিয়াজুল এবং তপসিয়ার মহম্মদ সালাউদ্দিন। অভিযোগ, অনুষ্ঠানে উপস্থিত কয়েকজন যুবক তাঁদের খাবার বিক্রি নিয়ে আপত্তি করেন। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কেন আমিষ খাবার বিক্রি হচ্ছে—এই প্রশ্ন তুলে দুই বিক্রেতাকে হেনস্তা করা হয়। তাঁদের প্যাটিস ফেলে দেওয়ার পাশাপাশি মারধর করা হয়, এমনকি কান ধরে ওঠবোস করানো হয় বলে অভিযোগ। রিয়াজুলের প্রায় তিন হাজার টাকার খাবার নষ্ট হয়। ঘটনাটি দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে এবং তা নিয়ে রাজ্যজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।
এরপরই ময়দান থানায় দু’টি পৃথক অভিযোগ দায়ের হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার পুলিশ তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের নাম সৌমিক ঘোষ (গোবরডাঙা), তরুণ ভট্টাচার্য (উত্তরপাড়া) এবং স্বর্ণেন্দু চক্রবর্তী (অশোকনগর)। তৃণমূল এবং সিপিএম—উভয় রাজনৈতিক দলই এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “যাঁরা আমিষ খান না, তাঁরা কিনবেন না। কিন্তু বিক্রেতাকে মারধর করা কেন? ওঁরা প্রতিদিন রোজগার করতে আসেন। এরকম করা যায় না।” এই ঘটনায় এফআইআর করেন বাম আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনার মাঝেই মুখ্যমন্ত্রী মমতার বার্তা—বাংলা সর্বধর্মের মিলনের স্থান, এখানে বিভেদের রাজনীতি বরদাস্ত করা হবে না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং পুলিশ আরও কেউ যুক্ত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে।