বাংলায় অবশেষে ফের শুরু হতে চলেছে একশো দিনের কাজ (MGNREGA)। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্র সরকার জানিয়েছে, কাজ শুরু করতে আর কোনও আপত্তি নেই।
বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি রাজশ্রী ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ এ বিষয়ে কেন্দ্রকে কড়া নির্দেশ দেয় —রাজ্যে দ্রুত একশো দিনের কাজ পুনরায় শুরু করতে হবে এবং বকেয়া অর্থ সংক্রান্ত হলফনামা জমা দিতে একমাস সময় দেওয়া হয়।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, “কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্প অনন্তকাল স্থগিত রাখা যায় না। বাংলার শ্রমিকদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা সংবিধানবিরোধী।” এর পরই কেন্দ্রীয় আইনজীবী আদালতকে জানান, “কাজ শুরু করতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। প্রক্রিয়া শীঘ্রই শুরু হবে।”
এই মামলার সূত্রপাত ২০২৩ সালে। রাজ্যে কেন্দ্রীয় তহবিল বন্ধ থাকার কারণে একশো দিনের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করে।
২০২৪ সালের জুনে হাই কোর্ট কেন্দ্রকে নির্দেশ দেয়, যেন বাংলায় প্রকল্পটি চালু করা হয়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি টি.এস. শিবজ্ঞানম মন্তব্য করেন, “কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্প অনির্দিষ্টকালের জন্য ঠান্ডা ঘরে ফেলা যায় না।”
কিন্তু সেই রায়ের বিরুদ্ধে কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টে যায়। তবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ ও সন্দীপ মেহতা বেঞ্চ হাই কোর্টের রায়ই বহাল রাখেন।
এর পর বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টে মামলার শুনানিতে কেন্দ্র জানায়, “আমরা কাজ শুরু করতে প্রস্তুত।”
রাজ্যের দাবি, তিন বছর ধরে মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পের (MGNREGA) অধীনে শ্রমিকদের প্রাপ্য অর্থ আসেনি। বকেয়া অর্থের পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা।
এই বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের পক্ষ থেকে হলফনামা বিনিময়ের জন্য আদালত এক মাস সময় দিয়েছে। পরবর্তী শুনানিতে বকেয়া মেটানোর প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে।
তিন বছর ধরে কেন্দ্রের তহবিল বন্ধ থাকায় রাজ্য জুড়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেস একাধিকবার বিক্ষোভ ও মিছিল করেছে, শ্রমিকদের প্রাপ্য টাকা দ্রুত মেটানোর দাবি জানিয়ে দিল্লিতেও অবস্থান বিক্ষোভে বসেছিলেন দলের সাংসদ-মন্ত্রীদের একাংশ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, “আদালতের এই নির্দেশ বাংলার গরিব মানুষের ন্যায়বিচারের প্রতীক।”
২০২২ সালের শুরু থেকে কেন্দ্র রাজ্যের একশো দিনের কাজের অর্থ প্রদান বন্ধ করে দেয়। অভিযোগ ছিল, প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় অডিট বা তদন্তের পরও তহবিল মেলেনি। ফলে গ্রামীণ শ্রমিকদের বড় অংশ কাজ হারিয়েছিলেন।
এখন আদালতের নির্দেশে সেই প্রকল্প ফের চালু হতে চলায় নতুন করে আশার আলো দেখছেন গ্রামীণ শ্রমিকেরা।