ইমন কল্যাণ সেন
চাষিদের থেকে খাদ্যশস্য কেনার জন্য ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এফসিআই)-কে নিয়মিত অগ্রিম টাকা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ-সহ যেসব রাজ্য ডিসেন্ট্রালাইজড প্রসিওরমেন্ট (ডিসিপি) পদ্ধতিতে খাদ্যশস্য কেনে, তাদের ক্ষেত্রে একই নিয়ম কার্যকর হয় না। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে অর্থ মেলাতে গিয়ে বছরভর টানাপোড়েন চলতে থাকে।
বর্তমানে ধান কেনা বাবদ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বাংলার প্রাপ্য প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র ঘোষণা করেছে, আগামী ২০২৫-২৬ আর্থিক বছর থেকে মাসিক ভিত্তিতে অর্থ প্রদান করা হবে। তবে শর্ত রাখা হয়েছে—‘খাদ্যশস্য বণ্টন সম্পূর্ণ হওয়ার পরেই টাকা মেটানো হবে’।
রাজ্য খাদ্যদপ্তরের আশঙ্কা, যদি এর মানে হয় রেশন গ্রাহকদের হাতে চাল পৌঁছনোর পরেই অর্থ মেলানো হবে, তবে বাস্তবে এতে কয়েক মাস দেরি হবে। কারণ ধান থেকে চাল উৎপাদন করে রেশন দোকানে পৌঁছনো পর্যন্ত দীর্ঘ সময় লাগে। ফলে নতুন নিয়ম কার্যকর হলেও অর্থ প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
কেন্দ্র ও রাজ্যের পার্থক্যপূর্ণ নীতি
- পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মতো রাজ্যে সরাসরি এফসিআই চাষিদের কাছ থেকে ধান-গম কেনে। ফলে সময়মতো অর্থ ছাড় হয়।
- পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্যে ‘ডিসিপি স্টেট’ হিসাবে রাজ্য সরকার নিজের উদ্যোগে খাদ্যশস্য কেনে ও কেন্দ্রীয় ভাণ্ডারে জমা দেয়। এখানেই জটিলতা তৈরি হয়।
অর্থ বরাদ্দের হিসেব
চলতি আর্থিক বছরে সেপ্টেম্বরের শুরু পর্যন্ত কেন্দ্র এফসিআই-কে খাদ্যশস্য কেনার জন্য দিয়েছে ৫৭,৬৭৮ কোটি টাকা। বিপরীতে ডিসিপি স্টেটগুলিকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৬,৬৫৪ কোটি টাকা। আগের আর্থিক বছরগুলিতেও দেখা গেছে, এফসিআই-এর তুলনায় রাজ্যভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় থাকা ডিসিপি রাজ্যগুলিকে বরাদ্দের অঙ্ক যথেষ্ট কম।
রাজ্য সরকারের আশঙ্কা, নতুন মাসিক অর্থপ্রদানের নিয়ম চালু হলেও বাংলার মতো রাজ্যে ধান-চাল বণ্টনের জটিল প্রক্রিয়ার কারণে বরাদ্দ পেতে দেরি হবে। ফলে চাষিদের কাছে দ্রুত অর্থ পৌঁছনোর প্রশ্নে অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে।