রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালদের বিল অনুমোদনের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া যাবে না। কেন্দ্র সরকার এমনটাই জানিয়েছে। এপ্রিল মাসে সুপ্রিম কোর্টের এক নির্দেশে রাষ্ট্রপতির জন্য তিন মাস এবং রাজ্যপালের জন্য এক মাসের ডেডলাইন নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেই নির্দেশের বিরোধিতা করেই কেন্দ্রের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে, এ ধরনের সময়সীমা চাপিয়ে দেওয়া হলে সংবিধানের ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট হবে এবং তৈরি হবে “সংবিধানিক বিশৃঙ্খলা”।
সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টে যুক্তি দেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে আদালতের বিশেষ ক্ষমতা থাকলেও আদালত সংবিধান সংশোধন করতে পারে না বা সংবিধান প্রণেতাদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করতে পারে না। বাস্তবে কিছু সীমিত সমস্যা থাকতে পারে বটে, কিন্তু তা বলে রাজ্যপালের পদমর্যাদাকে অধস্তন স্তরে নামিয়ে আনা যায় না। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির পদ গণতান্ত্রিক শাসনের উচ্চতর আদর্শের প্রতীক, এবং কোনও অভিযোগ থাকলে তা রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই মেটানো উচিত, বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপে নয়।
সংবিধানের ২০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাজ্যপাল কোনও বিল অনুমোদন করতে পারেন, আটকে রাখতে পারেন বা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারেন। আবার রাজ্যপাল চাইলে সেই বিল সংশোধনের জন্য ফের বিধানসভায় পাঠাতে পারেন, তবে বিধানসভা ফের পাস করলে রাজ্যপাল তা আটকে রাখতে পারেন না। সংবিধানের পরিপন্থী, রাষ্ট্রনীতির নির্দেশমূলক নীতি-বিরোধী বা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে তিনি রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্যও বিলটি সংরক্ষণ করতে পারেন।
গত ১২ এপ্রিল তামিলনাড়ুর এক মামলায় সুপ্রিম কোর্ট এই প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সময়সীমা বেঁধে দেয়। রায়ে বলা হয়, গৃহ মন্ত্রকের নির্দেশিকা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও প্রশ্ন তোলেন এবং সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চান। তিনি মোট ১৪টি প্রশ্ন উত্থাপন করেন, যার মধ্যে রয়েছে—২০০ ও ২০১ অনুচ্ছেদের আওতায় রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালের বিল সংক্রান্ত ক্ষমতার সীমারেখা।
এরপর প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের নেতৃত্বে একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ জুলাই মাসে এই প্রেসিডেনশিয়াল রেফারেন্স মামলার শুনানির সময়সূচি নির্ধারণ করে। বেঞ্চে বিচারপতি সুর্য কান্ত, বিক্রম নাথ, পি এস নরসিমহা ও অতুল এস চন্দুরকরও রয়েছেন। কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিকে ১২ আগস্টের মধ্যে লিখিত মতামত জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।