দশ বছর আগে ঘটে যাওয়া চিৎপুরের এক বৃদ্ধ দম্পতি হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত সঞ্জয় সেনকে ফাঁসির সাজা দিলেন শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। রায় ঘোষণায় তিনি এই অপরাধকে “বিরলের মধ্যে বিরলতম” বলে উল্লেখ করেন।
সঞ্জয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল প্রাণগোবিন্দ দাস (৬৬) ও তাঁর স্ত্রী রেণুকা দাসের (৫৪)। তাঁরা তাঁকে সন্তানসম ভালবাসতেন, এমনকি তাঁর রিকশাও কিনে দিয়েছিলেন। তাঁদের একমাত্র কন্যা থাকেন আমেরিকায়। পরিচারিকা পূর্ণিমার সঙ্গে সঞ্জয়ের বিয়েও দম্পতির উদ্যোগেই হয়। কিন্তু ২০১৫ সালের জুলাইয়ে সেই বিশ্বাসের বিনিময়ে ঘটে নৃশংস ঘটনা।
সঞ্জয় দম্পতিকে হত্যা করে তাঁদের ফ্ল্যাটেই ফেলে রেখে পালিয়ে যান। নগদ টাকা ও প্রায় ৫০ ভরি সোনা নিয়ে চম্পট দেন তিনি। তদন্তে উঠে আসে, লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে প্রাণগোবিন্দকে হত্যা করা হয়েছিল, এবং রেণুকার দেহেও আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন ছিল।
ঘটনার পর সঞ্জয় পালিয়ে যান পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে। সেখান থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। সেখানেই পাওয়া যায় খুনের অস্ত্র, রক্তমাখা জামাকাপড় এবং লুঠ হওয়া সোনা ও টাকা।
এক দশক ধরে মামলা চলার পর অবশেষে ফাঁসির সাজা ঘোষণা করে আদালত। পাশাপাশি, ডাকাতির অভিযোগে অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
সরকারি আইনজীবী সন্দীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সঞ্জয় ছিলেন পরিবারটির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেই বিশ্বাসেরই নির্মম প্রতারণা এই খুন। তাই এ সাজা একেবারেই প্রাপ্য।’’
ঘটনার তদন্ত করে লালবাজারের হোমিসাইড শাখা। বিচারক রায় ঘোষণার সময় বলেন, ‘‘নির্ভরশীলতার ভিতকে নৃশংসভাবে ভেঙে দিয়ে যা ঘটানো হয়েছে, তা সভ্য সমাজে বরদাস্ত করা যায় না।’’