‘ম্যান মেড বন্যা’র দায় ভুটান-ডিভিসির, দার্জিলিঙের মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা ও চাকরি ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

দার্জিলিঙের ধস ও বন্যা পরিস্থিতিতে মৃতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সকালে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে উত্তরবঙ্গ যাওয়ার আগে তিনি ঘোষণা করেন, “মৃতদের পরিবারকে রাজ্য সরকার ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেবে। সেই সঙ্গে পরিবারের একজন সদস্যকে দেওয়া হবে স্পেশ্যাল হোমগার্ডের চাকরি।”

মমতা বলেন, “টাকা কখনও জীবনের বিকল্প হতে পারে না। এটা আমাদের সামাজিক কর্তব্য। যাতে পরিবারগুলো কাউকে মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে না হয়।”

উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য ফের ভুটান থেকে জল ছাড়া ও ডিভিসির (DVC) আচরণের সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, “ভুটান ও সিকিমের জল এসে উত্তরবঙ্গে বন্যা তৈরি করেছে। ১২ ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অতি দুর্যোগের সঙ্গে এটি ম্যান-মেড বন্যা। এত জল যাবে কোথায়? আমরা বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডের জলও সহ্য করি, আর কত করব?”

মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস আগেই পৌঁছে গিয়েছেন উত্তরবঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি সোমবার প্রথমে হাসিমারা, তারপর নাগরাকাটা যাবেন। সঙ্গে রয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। মঙ্গলবার তিনি যাবেন মিরিক, যেখানে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে।

মমতা বলেন, “যতদূর যাওয়া সম্ভব, আমরা যাব। ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করব, তাঁদের পাশে দাঁড়াব।”

সরকারি হিসাবে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের — এর মধ্যে ১৮ জন মিরিক-কালিম্পঙে, এবং ৫ জন নাগরাকাটায়।
বৃষ্টিতে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক তিস্তার জলে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বহু জায়গায় ধস নেমে বিচ্ছিন্ন হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, পাহাড়ে আটকে থাকা পর্যটকদের নিরাপদে নামিয়ে আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, “৪৫টি ভলভো বাস ও রাজ্য পরিবহণ দফতরের বাস পাঠানো হয়েছে। শিলিগুড়িতে ২৫০ জনের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। হোটেলগুলিকে বলেছি, পর্যটকদের কাছ থেকে টাকা না নিতে। জলে অনেকের টাকাপয়সা, কাগজ নষ্ট হয়ে যায়। আমাদের মানবিক হতে হবে।”

তিনি আরও জানান, মিরিক ও নাগরাকাটায় কমিউনিটি কিচেন চালু করা হয়েছে, যাতে দুর্গত মানুষদের খাবার সরবরাহ করা যায়।

রবিবার কলকাতায় দুর্গাপুজোর কার্নিভালে উপস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে উঠেছিল কটাক্ষ। এর জবাবে তিনি বলেন, “দুর্গাপুজোয় কোটি কোটি মানুষ কলকাতায় এসেছিলেন। উৎসব সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে, তার জন্য ক্লাবগুলিকে ধন্যবাদ জানানো প্রয়োজন ছিল। আজ লক্ষ্মীপুজোর দিন, তবু আমাকে উত্তরবঙ্গে যেতে হচ্ছে। উৎসব নয়, মানবিকতাই বড় কথা।”

Related posts

‘শান্ত থাকুন, সংযত থাকুন, রাজনীতি ভুলে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ান’, নাগরাকাটা হামলার পর বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গে রাজনৈতিক উত্তেজনা! নাগরাকাটায় বিক্ষোভের মুখে বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ

নিজের লেখা গানে লক্ষ্মীপুজোর শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর, কোজাগরীর সকালে শুভেচ্ছা বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের