দার্জিলিঙের প্রখ্যাত ঐতিহ্যবাহী রেস্তরাঁ ‘গ্লেনারিজ়’-এর নীচতলার পানশালা এবং লাইভ মিউজ়িক বিভাগকে তিন মাসের জন্য বন্ধ করে দিল আবগারি দফতর। প্রয়োজনীয় নথি ছাড়াই পানশালা চালানো সহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় এই পদক্ষেপ বলে দফতর সূত্রের খবর। রেস্তরাঁ এবং পানশালার পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ‘ইন্ডিয়ান গোর্খা জনশক্তি ফ্রন্ট’-এর প্রধান অজয় এডওয়ার্ড কিছুদিন আগেই নতুন সেতুর উদ্বোধনে ‘গোর্খাল্যান্ড’ নাম ব্যবহার করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। ঠিক সেই সময়েই তাঁর রেস্তরাঁয় আবগারি অভিযানের ঘটনা পাহাড়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আবগারি দফতরের এক আধিকারিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে নথিপত্রে ত্রুটি এবং নিয়মবহির্ভূত কার্যকলাপের প্রমাণ মিলেছে। তাঁর কথায়, “কাগজপত্রে অসঙ্গতি থাকায় আগামী তিন মাসের জন্য লাইসেন্স সাসপেন্ড করা হয়েছে। চাইলে কর্তৃপক্ষ এই সময়ের মধ্যে আপিল করতে পারেন। তবে অনিয়মের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এর আগে রবিবার বিজনবাড়ি ব্লকের জোড়বাংলোয় টুংসুং চা-বাগানের কাছে টুংসুং খোলার উপর নির্মিত একটি নবনির্মিত সেতুর উদ্বোধন করেন অজয় এডওয়ার্ড। সেতুর সামনে বড় করে লেখা ছিল ‘গোর্খাল্যান্ড’। ঠিক এখানেই নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়। পাহাড়ের বেশ কিছু রাজনৈতিক দল দাবি করে, বহু বছর ধরে চলা পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি পূরণ না হওয়ায় সেই আবেগকে রাজনৈতিকভাবে উসকে তুলতেই এই নামকরণ করা হয়েছে। ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) বিষয়টি নিয়ে সরব হয়। যদিও অজয়ের পাল্টা দাবি, সেতুটি সরকারিভাবে নির্মিত নয়; পাহাড়বাসীর চাঁদা, কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্য ও তাঁর আর্থিক সহযোগিতায় তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের অনুমতি না নেওয়ার অভিযোগ উঠলেও তাঁর যুক্তি, “গোর্খাল্যান্ড আমাদের স্বপ্ন ও আবেগ। ২০১৭ সালের পর থেকে দাবি স্তিমিত হয়ে গিয়েছে। মানুষের মনে সেই দাবি ফের জাগিয়ে তুলতেই এই নামকরণ।”
স্থানীয় সূত্রের দাবি, প্রায় ১৪০ ফুট দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার, জিটিএ বা স্থানীয় প্রশাসনের কোনও আর্থিক ভূমিকা নেই। প্রশাসনিক অনুমতিও নেওয়া হয়নি। ফলে সেতুটি বেআইনি ভাবে নির্মিত—এই অভিযোগে সরব হয়েছে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চাও।
এই সেতু-নামকরণ বিতর্কের মধ্যেই গ্লেনারিজ়ের পানশালা বন্ধের সিদ্ধান্ত পাহাড়ের রাজনৈতিক মহলে নতুন করে জল্পনা বাড়িয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, দুটি ঘটনার মধ্যে অঘোষিত যোগসূত্র থাকতে পারে। পাহাড়ে অজয়ের জনপ্রিয়তা, তাঁর দলের সক্রিয়তা এবং গোর্খাল্যান্ড ইস্যুর পুনরুত্থান—সব মিলিয়ে রাজনৈতিক উষ্ণতা বাড়ছে বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের।
এই বিষয়ে জিটিএ মুখপাত্র শক্তি শর্মা বলেন, “পানশালা ও মিউজ়িকের অনুমতি ছিল না বলেই ৯০ দিনের জন্য তা বন্ধ করা হয়েছে। আবগারি দফতর নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ করেছে।”
একদিকে বেআইনি সেতু নির্মাণের অভিযোগ, অন্যদিকে গ্লেনারিজs অনিয়মের অভিযোগ—দুটি ঘটনাই এখন পাহাড় রাজনীতিতে উত্তাপ বাড়াচ্ছে। পাহাড়বাসীর দৈনন্দিন জীবন থেকে পাহাড়ি আত্মপরিচয়ের রাজনীতি—সব ক্ষেত্রেই অজয় এডওয়ার্ডকে ঘিরে বিতর্ক আরও তীব্র হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।