উত্তরবঙ্গে টানা বৃষ্টি ও ধসে ভয়াবহ পরিস্থিতি। পাহাড়ের বড় অংশ কার্যত বিপর্যস্ত। দার্জিলিং ও আশপাশের এলাকায় রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ধসে এবং সেতু ভাঙনে আটকে পড়েছেন শতাধিক পর্যটক। সরকারি ভাবে তাঁদের সঠিক সংখ্যা এখনও জানা না গেলেও, প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের দাবি— সংখ্যাটা বেশ বড়। আটকে পড়া পর্যটকদের বিকল্প রুট বা ‘পকেট রুট’ ব্যবহার করে সমতলে নামানোর চেষ্টা চলছে।
শনিবার রাতের প্রবল বর্ষণে দুধিয়া ব্রিজের একাংশ ভেঙে পড়ায় শিলিগুড়ি–মিরিকের মূল সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ। ফলে পর্যটক ও স্থানীয়দের যাতায়াতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, মিরিক সৌরেনিতে আটকে থাকা পর্যটকদের নল–পটং–লোহাগড় হয়ে শিলিগুড়িতে নিয়ে আসা হচ্ছে।
এদিকে, রোহিণী রোডে ধস নেমে শিলিগুড়ি–দার্জিলিং রাস্তাও বন্ধ। একইসঙ্গে হিল কার্ট রোড বিপর্যস্ত, চলছে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ।
তবে এখনও পর্যন্ত পাঙ্খাবাড়ি রোড খোলা রয়েছে, সেই পথেই কিছু যানবাহন চলাচল করছে। পাশাপাশি, দার্জিলিং থেকে মংপু হয়ে শিলিগুড়ির রাস্তা এবং মিরিক–পশুপতি–ঘুম–কার্শিয়াঙ রোডও চলাচলের উপযোগী রয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
তিস্তা নদীর জল বিপদসীমা ছাড়িয়ে ওঠায় এবং ধস নামায় বন্ধ হয়ে গেছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। ফলে শিলিগুড়ির সঙ্গে সিকিম ও কালিম্পংয়ের সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তবে বিকল্প হিসাবে লাভা–গরুবাথান এবং পানবু রোড দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এসব রাস্তায় ব্যাপক যানজট তৈরি হয়েছে, যার ফলে উদ্ধার ও সরবরাহ কার্যেও সময় লাগছে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত শতাধিক পর্যটককে দার্জিলিং, মিরিক ও কালিম্পং থেকে নিরাপদে সমতলে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে পাহাড়ের বিভিন্ন হোমস্টে এবং রিসর্টে আরও বহু পর্যটক আটকে রয়েছেন।
শনিবার রাতে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়, যখন বালাসন নদীর উপর দুধিয়া সেতুর একাংশ ভেঙে পড়ে। এর ফলে শিলিগুড়ি-মিরিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাতের অন্ধকারে সৌরেনির কাছে দারাগাঁওয়ে ধস নেমে একটি বাড়ি ভেঙে পড়ে।
আপার দুধিয়া ও ডাম্ফেডার এলাকায় চার থেকে পাঁচটি বাড়ি জলে তলিয়ে গেছে। সেইসব এলাকায় একাধিক হোমস্টেও ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি দুধিয়া নদীর তীরে থাকা বিএসএফ ক্যাম্পও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রবিবার সকালে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছেন মিরিক অঞ্চলে ৯ জন, সুকিয়াপোখরিতে ৭ জন এবং বিজনবাড়িতে ১ জন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে, উদ্ধারকাজ জোরদার করা হয়েছে। দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার দুর্যোগপীড়িত এলাকায় সিভিল ডিফেন্স, দমকল ও এনডিআরএফ মোতায়েন রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সোমবারই উত্তরবঙ্গে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন করবেন।