পর্যাপ্ত খাবার ও থাকার জায়গার অভাবে বাংলায় দ্রুত কমছে নীলকণ্ঠ পাখির সংখ্যা। ছোট মাছ, পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ খেয়ে বাঁচে এই পাখি। কিন্তু আধুনিক কৃষিকাজে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার, পুরনো গাছের হ্রাস এবং ঝোপঝাড় কেটে ফেলার ফলে নীলকণ্ঠরা তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল হারাচ্ছে।
বর্ধমানের প্রবীণ বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এক সময় শরৎকালে আকাশে হামেশাই দেখা যেত এই নীলচে রঙের পাখিকে। অনেকেই কপালে হাত ঠেকাতেন, কারণ হিন্দু ধর্মে নীলকণ্ঠকে ‘মহাদেবের দূত’ বলা হয়। কথিত আছে, কৈলাসে দেবী উমার ফিরে যাওয়ার বার্তা নিয়েই এই পাখি আসে। দুর্গাপুজোর দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের সময়ও আগে নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে দেওয়ার রীতি ছিল। এখন তার বদলে প্রথা রক্ষার্থে মাটির তৈরি পাখি ব্যবহার করা হয়।
বনদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, “মানব সভ্যতার উন্নতিতে অনেক পাখি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। খাবার ও আস্তানা না থাকায় তাদের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই কমছে।”
বর্ধমানের সুদীপ্ত দাস জানালেন, “কয়েক বছর আগেও পুজোর মরশুমে নীলকণ্ঠ ধরার জন্য চোরা শিকারিদের তৎপরতা দেখা যেত। পরিবারগুলো মোটা টাকায় কিনত এই পাখি। তবে বনদপ্তরের নজরদারিতে এখন শিকার অনেকটাই কমেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখন এই পাখিই আর চোখে পড়ে না।”
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নীলকণ্ঠ কৃষকের বন্ধু। কারণ জমির কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসল রক্ষা করে এই পাখি। কিন্তু কীটনাশকের ব্যাপক প্রয়োগে সমস্ত পোকামাকড় মারা যাচ্ছে, ফলে নীলকণ্ঠও খাদ্যাভাবে বিপন্ন হচ্ছে।
পরিবেশবিদরা সতর্ক করে দিচ্ছেন, যেমনভাবে গ্রামীণ উঠান থেকে চড়ুই পাখির কিচিরমিচির হারিয়ে গিয়েছে, একইভাবে হারিয়ে যাচ্ছে নীলকণ্ঠও। নতুন প্রজন্ম এই ঐতিহ্যবাহী পাখিটিকে এখন শুধু বইয়ের পাতায় দেখতে পাচ্ছে।