দিন কয়েকের ব্যবধানে পর পর দু’বার দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার পাঠানো তাঁর সর্বশেষ চিঠির ঠিক এক দিনের মাথায় তৃণমূলকে চিঠি দিয়ে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসার অনুমতি দিল নির্বাচন কমিশন। কমিশনের চিঠিতে জানানো হয়েছে — রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের অনুরোধের ভিত্তিতেই এই বৈঠকের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চিঠিতে কমিশন লিখেছে, “নির্বাচন কমিশন সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনায় আগ্রহী।” সেই সূত্রেই পাঁচ জনের তৃণমূল প্রতিনিধি দলকে দিল্লিতে কমিশনের সদর দফতরে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বৈঠক নির্ধারিত হয়েছে আগামী ২৮ নভেম্বর, শুক্রবার সকাল ১১টায়। প্রতিনিধি দলে কারা থাকবেন, সেই নামের তালিকাও তৃণমূলকে জমা দিতে বলা হয়েছে।
ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) প্রক্রিয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী গত সপ্তাহ থেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। গত সপ্তাহে পাঠানো চিঠিতে তিনি পুরো প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার অনুরোধ জানান। তাঁর অভিযোগ, পরিকল্পনাহীনভাবে এসআইআর চালানো হচ্ছে এবং সেই চাপেই দুই বুথ লেভেল অফিসারের (বিএলও) মৃত্যু ও বেশ কয়েক জনের অসুস্থতা ঘটেছে। মুখ্যমন্ত্রী এই মৃত্যুর ঘটনাকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে দাবি করেছেন।
মঙ্গলবার লেখা দ্বিতীয় চিঠিতে আরও দুটি সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, কমিশন কি কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে?
ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ অনুযায়ী, সিইও দফতর টেন্ডার ডেকে এক বছরের জন্য ১,০০০ ডেটা এন্ট্রি অপারেটর এবং ৫০ জন সফটওয়্যার ডেভেলপার নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু জেলাস্তরের অফিসগুলিতে এই কাজের জন্য আগেই কর্মী নিযুক্ত রয়েছে। সেই অবস্থায় বাইরে থেকে এত বড় সংখ্যক কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা।
বেসরকারি ভবনকে ভোটকেন্দ্র করার ধারণা নিয়েও আপত্তি
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, কমিশন বেসরকারি মালিকানাধীন ভবনকেও ভোটকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহারের কথা ভাবছে। তাঁর মতে, এই সিদ্ধান্ত স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও সাধারণ মানুষের বিশ্বাসের পরিপন্থী। সরকারি বা আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো নিরাপদ ও নিরপেক্ষ জায়গার বদলে বেসরকারি ভবন নির্বাচন ব্যবস্থাকে সন্দেহের মুখে ফেলতে পারে।
বৈঠক কি সমাধানের পথ খুলবে?
দিন কয়েক ধরে মুখ্যমন্ত্রীর ধারাবাহিক অভিযোগ ও প্রশ্নের প্রেক্ষিতে কমিশনের এই বৈঠক অনুমোদন রাজনৈতিক মহলে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এখন দেখার, শুক্রবারের এই আলোচনা এসআইআর বিতর্কে নতুন কোনও সমাধানের ইঙ্গিত দেয় কি না।