ডেস্ক: ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’র তালিকাভুক্ত করে। সুন্দরবনে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ। এমন যুগলবন্দি এই উপমহাদেশে একমাত্র আছে সুন্দরবনেই। বনভূমিটি, স্বনামে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরনের পাখি,হরিণ, কুমির অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। ৫ মিলিয়ন মানুষের দেশ।
সেই সুন্দরবন উষ্ণায়নের পাশাপাশি একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ে ভারতের মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে! আর এই আশঙ্কা আরও প্রবল করেছে সদ্য সুপার সাইক্লোন আমফান বয়ে যাওয়ার পর। এছাড়াও ২০২০তে দক্ষিণবঙ্গে আছড়ে পড়ছিল ঘূর্ণিঝড় আমপান।তারপর বছর ঘুরতে না ঘুরতে আছড়ে পড়ল ইয়াস, তছনছ হয়ে গিয়েছিল সুন্দরবনের এক বিরাট অংশ। সুন্দরবনের ফুসফুস ম্যানগ্রোভ। আমফানে ক্ষতবিক্ষত সেই ফুসফুস। এখন শ্বাস নিতে কষ্ট হয় গরান, গেওয়া, হেঁতাল, পরশ, সুন্দরীদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন সুন্দরবনের ভীত নড়ে গিয়েছে। এক কথায় ঝড়ের দাপটে অঞ্চলটিকে বিধ্বস্ত বনাঞ্চল। আমপানে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল হাজার হাজার সুন্দরী গাছ। বহু জায়গায় হারিয়ে যায় সুন্দরবনের সৌন্দর্য। সুপার সাইক্লোন আমফানে প্রভাবে কার্যত ধ্বংসের স্তূপে দাঁড়িয়ে বাদাবন ও তার অধিবাসীরা। ভেঙে গিয়েছে বাঁধ, ক্ষতিগ্রস্ত বিট অফিস, ভেঙেছ জেটি, নষ্ট হয়েছে জঙ্গেলর ধারে নাইলন ফেন্টিং।
এই অঞ্চলের মানুষরা মৃতভয়কে হাতে নিয়ে বেঁচে থাকে। কৃষি, মাছ ধরার মৌমাছি পালন এবং কিছু পর্যটনের উপর নির্ভরশীল ছিল এদের জীবন জীবিকা। ঝড় ও করোনার দাপটে সমস্ত ধরণের জীবিকা এখন ধ্বংস হয়ে গেছে। এই অসহায় মানুষের পাশে এসে দাড়িয়েছে ফ্রিড স্বেচ্ছাসেবকরা। গত ২৬ শে জুলাই ফ্রিড স্বেচ্ছাসেবকরা এই পরিবারগুলিকে সাহায্যে জামা কাপড় তুলে দিয়েছেন। বাচ্চাদের হাতে তুলে দিয়েছে বই খাতা। খাদ্যশস্য তেল বিস্কুট সয়াবিন ডাল সহ শুকনো রেশন তুলে দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সহায়তা করেছে।
ঝড়ে পূর্বাঞ্চলের পাথরপ্রতিমা, গোসাবা, হিঙ্গলগঞ্জ, হাড়োয়া, মিনাখা এবং সন্দেশখালি-২ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁধ ভেঙে নোনাজলে প্লাবিত হয়ে। এইসব প্লাবিত হয়ে যাওয়া অঞ্চলগুলিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে। ওই অঞ্চলকে বাঁচাতে ম্যানগ্রোভ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল ফ্রিড। ফ্রিড বেড়িবাঁধ এবং অন্যান্য এলাকায় ম্যানগ্রোভ বাগান তৈরি করতে স্থানীয় সংস্থাগুলির সাথে সহযোগিতা করবেন। শুধু ম্যানগ্রোভকে বাঁচানো নয়, মেয়েদের পাশে দাঁড়িয়েছে এই সংস্থা। তাদের বিকাশ ঘটানো ও জীবিকা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে।