বিশ্বের বুকে টাটকা ২০ বছর আগের ৯/১১ স্মৃতি, আজও কাটেনি সাক্ষীদের দুঃস্বপ্ন

ডেস্ক: ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার বুকের চরম সন্ত্রাসের দাগ কেটে দেয় জঙ্গি হামলা। দেখতে দেখতে কেটে গেল ২০ টা বছর। সেই আমেরিকা সহ গোটা বিশ্বে আতঙ্কের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারকে মুহূর্তে গুড়িয়ে দিয়েছিল সন্ত্রাসবাদ ৷ শিশু বৃদ্ধ, মহিলা-সহ বেঘোরে প্রাণ হারাতে হয় ২,৭৫৩ জনকে৷


মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস এই হামলাকে ‘আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং ধৃষ্টতাপূর্ণ হামলা’ আখ্যা দেয়। ৯/১১ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে একদিকে যেমন মার্কিন আইন কঠোরতর হয়, তেমনি ঢেলে সাজানো হয় মার্কিন আমলাতন্ত্র। গঠিত হয় নতুন বাহিনী, নতুন মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্রের ডাকে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ একতাবদ্ধ হয় পশ্চিমা শক্তিগুলো। আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে তারা ক্ষমতাচ্যুত করে তালেবান জঙ্গিদের। 


তিনজন ওই দিনের ঘটনার অন্যতম জীবিত সাক্ষী। ২০ বছর আগে দিনটা ছিল মঙ্গলবার। রোজের মতোই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ৭২ তলার অফিসে উত্তরের গেট দিয়েই ঢোকেন লরেন। মার্কিন এক সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টরের পদে কর্মরতা ছিলেন তিনি।“প্রচণ্ড আওয়াজে প্রথমে আমার মাথা ঘুরে গেল। আমার গোটা গায়ে আগুন। ওই অবস্থায় আমি রাস্তায় চলে আসি। অজ্ঞান হওয়ার আগে বুঝতে পারছিলাম, দমকলকর্মীরা আমার গায়ে জল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছেন। খানিকক্ষণের জন্য অজ্ঞানও হয়ে গিয়েছিলাম। জ্ঞান ফিরতে অনুভব করলাম গোটা শরীর জ্বলে যাচ্ছে। বুঝতে পারলাম আমি পুড়ে গিয়েছি।”


এক মার্কিন মহিলার স্মৃতি আজও টাটকা। সেই দিনের ঘটনা বলতে বসে লরেন জানালেন, জঙ্গি হামলায় তাঁদের অফিসের প্রায় ৬০০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। বিমান হামলার পর অনেকে প্রাণে বাঁচতে ৭২ তলা থেকে ঝাঁপও মেরেছিলেন। কিন্তু কী ভাবে নিজে বেঁচেছিলেন লরেন ? “আমার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। মৃত্যু আমার নিশ্চিত ছিল। আমার প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন ডাক্তার।


সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৬৭ মডেলের একটি বিমান আঘাত হানে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ১১০ তলাবিশিষ্ট নর্থ বিল্ডিংয়ের ৮০তম তলায়। বিমানটিতে ২০ হাজার গ্যালন জেট ফুয়েল থাকায় খুব দ্রুতই ভবনে আগুন ধরে যায়। আত্মঘাতী জঙ্গিদের ছিনতাই করা আরেকটি বিমান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সাউথ বিল্ডিংয়ের ৬০তম তলায় আঘাত হানে। এটিও একটি দূরপাল্লার বোয়িং ৭৬৭ বিমান। এই বিমানটি ছিল ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের। সকাল ১০টার দিকে সাউথ বিল্ডিং এবং সাড়ে ১০টার দিকে নর্থ বিল্ডিং পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পুড়তে থাকা জেট ফুয়েলের প্রচণ্ড তাপে গলে গিয়েছিল ভবন দুটির ইস্পাতের কাঠামো। ফলে একটির ওপর একটি তলা ধসে পড়ে পুরো ভবনকেই মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়।


প্রায় ১০ হাজার মানুষ আহত হয়েছিলেন ওই ঘটনায়, যাদের অনেকের আঘাতই মারাত্মক ধরণের। টুইন টাওয়ার হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন মোট দুই হাজার ৭৬৩ জন। এদের মধ্যে রয়েছেন উদ্ধার তৎপরতায় গিয়ে প্রাণ হারানো ৩৪৩ ফায়ার ব্রিগেড ও চিকিৎসা কর্মী, নিউ ইয়র্ক পুলিশের ২৩ জন এবং পোর্ট অথরিটি পুলিশের ২৩ জন সদস্য।

Related posts

পুজোর ভিড় সামলাতে শিয়ালদহে বিশেষ ব্যবস্থা, চালু হচ্ছে ৩১টি স্পেশাল ট্রেন

‘যাঁরা বলতেন বাংলায় দুর্গাপুজো হয় না, আজ তাঁরাই উদ্বোধন করছেন’— অমিত শাহকে তীব্র কটাক্ষ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের

সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে পুজো উদ্বোধনে অমিত শাহ, মঞ্চ থেকেই বাংলায় বিজেপি সরকার গঠনের ডাক