সিঙ্গুর থেকে সুগন্ধার দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। ২০০৮ থেকে ২০২৫— ব্যবধান ১৭ বছরের। কাকতালীয় এই সংখ্যার ছকেই ইতিহাস যেন নতুন মোড় নিচ্ছে। কারণ, টাটাদের ন্যানো প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার ১৭ বছর পর ফের হুগলি থেকেই ঘোষণা হল— বাজারে আসছে এক লক্ষ টাকার কম দামের চারচাকা গাড়ি।
শনিবার ‘সাইনোসোর’ সংস্থা তাঁদের বিদ্যুৎচালিত তিনচাকার গাড়ি উদ্বোধন করে। সেই মঞ্চ থেকেই কর্ণধাররা জানালেন, দীপাবলির পরে শুভ দিনে লঞ্চ হবে চারচাকার প্রোটোটাইপ, আর ২০২৬ সালের জানুয়ারিতেই পথে নামবে নতুন গাড়ি।
অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান এবং উজ্জ্বল বিশ্বাস। ছিলেন তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষও। সূত্রের খবর, মাস কয়েক আগে কুণালই প্রথম সংস্থাকে পরামর্শ দেন, তিনচাকা হলে চারচাকা নয় কেন? শনিবার উদ্বোধনী মঞ্চে কুণালের সেই তথ্য ‘ফাঁস’-এর পরেই সংস্থার তরফে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয় চারচাকা গাড়ি আসার।
গাড়ির বৈশিষ্ট্য
সংস্থার অন্যতম কর্ণধার সম্পূর্ণা ঘোষ জানিয়েছেন—
- মূল্য: এক লক্ষ টাকারও কম
- শক্তি: সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত
- ধারণক্ষমতা: চালক-সহ চার জন বসতে পারবেন
- লক্ষ্য: মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারকে নিজস্ব গাড়ির মালিক করা
গাড়ির নাম এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে সম্পূর্ণার ইঙ্গিত, নামকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতার আশীর্বাদ চাইতে পারে সংস্থা।
ন্যানোর স্মৃতি ও রাজনীতি
২০০৮ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সিঙ্গুর থেকে গুজরাতের সানন্দে গিয়ে ওঠে টাটাদের ন্যানো প্রকল্প। দুর্গাপুজোর চতুর্থীর দিন কলকাতায় এসে রতন টাটা ঘোষণা করেছিলেন, তাঁরা সিঙ্গুর ছাড়ছেন। দায়ী করা হয়েছিল তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মমতা অবশ্য পরে বারবার বলেন, তাঁর লড়াই ছিল না টাটাদের বিরুদ্ধে, বরং তৎকালীন বাম সরকারের জমি অধিগ্রহণ নীতির বিরুদ্ধে।
টাটাদের ন্যানোর উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মধ্যবিত্তকে সাধ্যের মধ্যে চারচাকা দেওয়া। ১৭ বছর পর সাইনোসোরের লক্ষ্যও সেই একই— মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের নাগালের মধ্যে গাড়ি পৌঁছে দেওয়া।