মহম্মদ ইউনুসের ‘ক্যাঙারু আদালতে’ ফাঁসির সাজা ঘোষণার পরে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলল ভারত। সোমবার ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার অব্যবহিত পরেই নয়াদিল্লি একটি সরকারি বিবৃতি জারি করে জানায়, রায়টির উপর ভারতের নজর রয়েছে এবং প্রতিবেশী বাংলাদেশের গণতন্ত্র, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দিল্লি সব পক্ষের সঙ্গে সুষ্ঠু যোগাযোগ বজায় রাখবে।
বিদেশমন্ত্রকের তরফে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে রায় দেওয়া হয়েছে, তা আমাদের নজরে রয়েছে। ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা চাই বাংলাদেশে শান্তি, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক। এই লক্ষ্যে ভারত বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে যোগাযোগ রাখবে।” কূটনৈতিক মহলের মতে, ইউনুসের শাসনে যেখানে ধারাবাহিকভাবে ভারতবিরোধী আবহ সৃষ্টি করা হয়েছে এবং হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে প্রচার চলছে, সেখানে নয়াদিল্লির এই বিবৃতি তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের বক্তব্য স্পষ্ট করছে যে, আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করলেও ভারত সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া বন্ধ করবে না। একইসঙ্গে কূটনৈতিক স্বার্থে বিএনপি-সহ অন্যান্য দলের সঙ্গেও সমানভাবে যোগাযোগ রাখবে দিল্লি, অর্থাৎ ঢাকা কোন দলকে নিষিদ্ধ করল বা রাখল—সেই সিদ্ধান্তকে ভারত তার কূটনৈতিক নীতি নির্ধারণে প্রাধান্য দেবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বার্তা ইউনুস প্রশাসনের প্রতি একটি সূক্ষ্ম কূটনৈতিক চাপও তৈরি করেছে। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামি লিগকে উপেক্ষা না করে ভারত দেখিয়ে দিল, গণতন্ত্রের পরিসরে সকল দলকে সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কেও ভারত এই কঠিন মুহূর্তে হাসিনা ও তাঁর দলের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দিল বলেই মনে করছেন অনেকেই।
উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের সময়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন হাসিনা। এরপর থেকেই ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তাঁর বিরুদ্ধে নানান মামলা দায়ের হয়—যার মধ্যে রয়েছে ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালানোর নির্দেশ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, আয়নাঘর সংক্রান্ত অভিযোগ সহ একাধিক গুরুতর ধারা। সোমবার বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার, বিচারপতি মহম্মদ শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মহম্মদ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর বেঞ্চ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে। রায় ঘোষণার পরই ঢাকার রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, আর আন্তর্জাতিক মহলেও এই রায় নিয়ে তীব্র আলোচনা শুরু হয়।