কালীপুজোর রাতে শব্দবাজি ফাটানো রুখতে কড়া নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট ও কলকাতা হাই কোর্ট। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, রাজ্যে রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্তই কেবল পরিবেশবান্ধব সবুজ বাজি পোড়ানো যাবে। শব্দবাজি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু আদালতের নির্দেশ মানা হল না সর্বত্রই। রাত বাড়তেই মহানগরের আকাশ যেন ফেটে পড়ল শব্দবাজির আওয়াজে!
উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার নানা প্রান্তে রাত ১০টার পর থেকেই বাজির শব্দে তটস্থ বাসিন্দারা। প্রশাসনের কাছে একাধিক অভিযোগও জমা পড়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কন্ট্রোল রুমে রাত সাড়ে নটা পর্যন্ত অন্তত ১৭টি অভিযোগ জমা পড়ে, প্রায় সবক’টিই শব্দবাজি সংক্রান্ত। সল্টলেক, গড়িয়া, টালিগঞ্জ, বেলগাছিয়া, লেকটাউন—শহরের একাধিক জায়গায় বাজি ফাটানোর অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আদালতের নির্দেশ মানতে কালীপুজোর আগে থেকেই প্রচার ও অভিযান চালানো হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় টহলদারিও জোরদার। তবে রাত গভীর হতে থাকলে বহুতলগুলির ছাদ থেকে বাজি ফাটানোর ঘটনাও দেখা গিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই সেই শব্দ ৯০ ডেসিবেলের বেশি বলে অভিযোগ তুলেছেন পরিবেশবিদরা।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, রাত ১০টা পর্যন্ত শহরের বাতাসে দূষণের মাত্রা মাঝারি ছিল। তবে রাত যত গভীর হয়েছে, ততই বেড়েছে বারুদের গন্ধ ও ধোঁয়ার ঘনত্ব। বাতাসে PM 2.5 মাত্রা ১৫০ ছাড়ানোর আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
পরিবেশ কর্মী অনিরুদ্ধ মুখোপাধ্যায় বলেন,“প্রতি বছর একই দৃশ্য দেখা যায়। আদালতের নির্দেশ থাকলেও সাধারণ মানুষ সচেতন হচ্ছেন না। শব্দবাজি শুধু বয়স্ক ও শিশুদের নয়, প্রাণীদের কাছেও ভয়াবহ। এবারও সেই পুরনো চিত্রই দেখা গেল।”
এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যাঁরা আদালতের নির্দেশ অমান্য করে শব্দবাজি ফাটিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষিত হওয়ায় উদ্বিগ্ন পরিবেশপ্রেমীরা। প্রশাসন বলছে, অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবুও প্রশ্ন উঠছে—আলো আর আনন্দের উৎসব কি বারুদের গন্ধে ঢেকে যাচ্ছে না?