শারদ উৎসবের পরেই বাংলার সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হল ৪৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার দিনক্ষণ। সোমবার দ্য পার্ক হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলনে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড জানাল, আগামী ২২ জানুয়ারি ২০২৬-এ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বইমেলার সূচনা হবে। মেলা চলবে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
বছরের পর বছর ধরে সল্টলেকের করুণাময়ী বইমেলা প্রাঙ্গনেই আয়োজন হচ্ছে কলকাতা বইমেলা, এবারের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে এবারে এক বিশেষ আকর্ষণ— প্রথমবারের মতো থিম কান্ট্রি আর্জেন্টিনা।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় ও সভাপতি সুধাংশু শেখর দে, সঙ্গে ছিলেন কলকাতায় আর্জেন্টিনা দূতাবাসের প্রতিনিধিরাও। তাঁদের হাতেই উদ্বোধন হল এবারের থিম কান্ট্রির লোগো।
ত্রিদিববাবু বলেন, “আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাংলার সম্পর্ক কেবল কূটনৈতিক নয়, সাংস্কৃতিক ও আবেগেরও। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ভিক্টোরিয়া ওকোম্পোর বন্ধুত্বে তৈরি হয়েছিল এক অটুট সাহিত্যিক সেতু। আর খেলাধুলার জগতে দিয়োগো মারাদোনা এবং লিওনেল মেসি সেই সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন।”
গিল্ডের সভাপতি সুধাংশু শেখর দে বলেন, “আগামী ডিসেম্বরে লিওনেল মেসির ভারতে আসা বাংলার বইমেলাকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলবে। ফুটবলের এই আবেগকেও আমরা বইমেলায় জায়গা দেব।”
এবারের বইমেলায় অংশ নেবে ব্রিটেন, আমেরিকা, জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কলম্বিয়া, স্পেন, পেরু, জাপান, থাইল্যান্ডসহ লাতিন আমেরিকার একাধিক দেশ। দেশের প্রায় সব রাজ্যের প্রকাশক সংস্থাও থাকবে।
গিল্ডের তরফে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালের বইমেলায় প্রায় ২৭ লক্ষ বইপ্রেমী এসেছিলেন, আর বই বিক্রির অঙ্ক ছিল ২৩ কোটি টাকা।
আগামী বছর ২০২৭ সালে সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে বইমেলাকে ঘিরে বিশেষ পরিকল্পনা করছে গিল্ড। প্রথম ২০ বছরের (১৯৭৬–১৯৯৬) বইমেলার বিরল ছবির প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
তাছাড়া, কলকাতা লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হবে ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি, যেখানে দেশ-বিদেশের লেখক, কবি, সাহিত্য অনুরাগীদের মিলনমেলা হবে।
তবে এবারের বইমেলায়ও বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন থাকছে না, যা নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ রয়েছে পাঠক ও প্রকাশকদের মধ্যে।
তবু, আর্জেন্টিনাকে থিম কান্ট্রি হিসেবে বেছে নেওয়ায় এবং মেসি–মারাদোনার স্মৃতিতে মুগ্ধ ফুটবল–প্রেমী বাংলা এবার বইমেলাকে নতুন আবেগে সাজিয়ে তুলবে—এমনই আশা প্রকাশ করেছেন গিল্ডের কর্তারা।