পূর্ব কলকাতার জলাজমিতে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করল কলকাতা হাই কোর্ট। জলাভূমি বুজিয়ে নির্মাণের অভিযোগে দায়ের হওয়া এক মামলার শুনানিতে বিচারপতি অমৃতা সিনহা জানিয়ে দিলেন, নতুন কোনও বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বা জলের সংযোগ দেওয়া যাবে না। বেআইনি উন্নয়ন রুখতে আদালতের এই নির্দেশকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে প্রশাসনিক মহল।
২০০৬ সালের জলাভূমি সংরক্ষণ আইনকে সামনে রেখে বিচারপতি স্পষ্ট জানান, জলাজমিতে কোনও ধরনের অবৈধ নির্মাণ হলে কর্তৃপক্ষ আইনানুগ কড়া পদক্ষেপ নিতে পারবেন ও নিতে হবে। এ ধরনের নির্মাণকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না, এবং কোনও সরকারি পরিষেবার মাধ্যমেও তা সুবিধা পাবে না—এই অবস্থানও স্পষ্ট করে আদালত।
সম্প্রতি পূর্ব কলকাতা জলাজমি বুজিয়ে অবৈধ নির্মাণের বিরোধিতায় হাই কোর্টে মামলা দায়ের হয়। সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি সিনহা জলাভূমি রক্ষার গুরুত্ব নিয়ে কড়া পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি নির্দেশ দেন, জলাভূমির সংরক্ষিত এলাকার দাগ নম্বর ও অন্যান্য তথ্য কর্তৃপক্ষকে নিজেদের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। পাশাপাশি এই তথ্য ইংরেজি ও আঞ্চলিক সংবাদপত্রেও প্রকাশ করতে হবে যাতে সাধারণ মানুষ পরিষ্কারভাবে জানতে পারেন, কোন জমিতে নির্মাণ নিষিদ্ধ।
শুধু জমির তালিকা প্রকাশ নয়, বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ নিয়েছে তার বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতেও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বেআইনি নির্মাণ কোথায় হয়েছে, কীভাবে হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নথিভুক্ত, এবং কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে—সবই আদালতের কাছে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে হবে।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি। সেদিনই বেআইনি নির্মাণ রুখতে প্রশাসন কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট হাই কোর্টে পেশ করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সিনহা।
পূর্ব কলকাতা জলাভূমি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত Ramsar Site হিসেবে পরিচিত। এই অনন্য পরিবেশগত অঞ্চল, জলাধার ও পরিশোধন ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে আদালতের কড়া অবস্থান প্রশাসনের উপর চাপ বাড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে।