খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর ভোটারদের নাম বাদ পড়া নিয়ে ক্রমবর্ধমান বিতর্কের মাঝেই বুথ লেভেল এজেন্টদের (বিএলএ) নিয়ে বৈঠক ডাকলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ২২ ডিসেম্বর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কলকাতা-সহ হাওড়া, হুগলি ও সংলগ্ন জেলার বিএলএ-দের মূলত ডাকা হয়েছে এই বৈঠকে। শুধু বিএলএ নন, নির্দিষ্ট বিধানসভায় বুথে বুথে ঘুরে যাঁরা ভোট সংক্রান্ত কাজে যুক্ত থাকেন, সেই গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদেরও উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর যেসব নাম বাদ গিয়েছে, তার পিছনে কী কারণ, বৈধ কোনও ভোটারের নাম বাদ পড়েছে কি না—এই বিষয়গুলিতেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর স্পষ্ট বার্তা দেবেন বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা। মঙ্গলবার খসড়া তালিকা প্রকাশের দিনই নিজের কেন্দ্র ভবানীপুর নিয়ে এক দফা বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। কালীঘাটে নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠানো হয় ভবানীপুরের বিএলএ এবং এলাকার পুর কাউন্সিলরদের। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিও। সেখানেই বৈধ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে কি না, তা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এসআইআর (Special Intensive Revision) ঘোষণা হতেই রাজ্যজুড়ে বুথ ধরে ধরে ক্যাম্প শুরু করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। খসড়া তালিকা প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশনের তরফে যেসব নাম বাদ পড়ার কথা জানানো হয়েছে, তার মধ্যে কতজন বৈধ এবং কতজন অবৈধ—প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে যাচাই করতে বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট নির্দেশ দেন, পাড়ায় পাড়ায় ক্যাম্প করে মানুষের পাশে থাকতে হবে। নথি সংক্রান্ত সমস্যায় যাঁরা পড়ছেন, তাঁদের ‘মে আই হেল্প ইউ’ ক্যাম্পে নিয়ে যেতে এবং প্রয়োজনে বাড়িতে গিয়ে সাহায্য করার কথাও বলেন তিনি।
বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া ভাষায় বলেন, “বৈধ কোনও ভোটারের নাম বাদ দেওয়া যাবে না।” তিনি জানতে চান, বুথে বুথে সরকারি বিএলও এবং দলের বিএলএ-দের মধ্যে যথাযথ সমন্বয় ছিল কি না। কোথাও সমন্বয়ের ঘাটতি থাকলে, তার কারণ কী, তাও জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কিছু ক্ষেত্রে ফর্ম ভুলবশত জমা না পড়ার ঘটনা ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, কোথাও জীবিত কোনও ভোটারকে ‘মৃত’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। পাশাপাশি বহুতল আবাসনগুলিতেও বিশেষ নজর রাখার কথা বলেন তিনি। পরবর্তী ধাপে যেসব ভোটারকে শুনানির জন্য ডাকা হবে, তাঁরাও যাতে কোনও সমস্যায় না পড়েন, সেই দায়িত্বও নিতে বলেছেন তৃণমূলনেত্রী। এ সংক্রান্ত ওয়ার্ডভিত্তিক রিপোর্ট তৈরির নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সব মিলিয়ে খসড়া ভোটার তালিকা ঘিরে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগের আবহে, সংগঠনের নিচুতলা পর্যন্ত সক্রিয় রেখে বৈধ ভোটাধিকার রক্ষায় যে তৃণমূল কংগ্রেস মাঠে নেমে পড়েছে, সেই বার্তাই স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।