ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়ন, শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধিকে পাখির চোখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিল্প টানতে প্রতি বছর কলকাতায় বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের আয়োজন করে রাজ্য সরকার। তার ফলেও রাজ্যে বিনিয়োগ বেড়েছে, আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশ থেকেও লগ্নি এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তা সত্ত্বেও বিরোধীরা প্রায়শই রাজ্যে শিল্প ও কর্মসংস্থানের সুযোগ নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বুধবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত এক ব্যবসায়ী সম্মেলনের মঞ্চ থেকে সেই সব প্রশ্নের কাজ দিয়েই জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন ব্যবসায়ীদের ‘বাংলার অর্থনীতির মেরুদণ্ড’ বলে উল্লেখ করে তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এমএসএমই) অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বর্তমানে রাজ্যে ৬৬০টির বেশি এমএসএমই ক্লাস্টার রয়েছে এবং প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ এই ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মহিলা উদ্যোগপতি রয়েছেন। তাঁর কথায়, “এমএসএমই খাতে কয়েক লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।”
অনলাইন কেনাকাটির প্রসার সত্ত্বেও খুচরো ব্যবসায়ীর গুরুত্ব যে কমেনি, তা-ও স্পষ্ট করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “অসংগঠিত ক্ষেত্রে ৬৫ লক্ষ ব্যবসায়ী রয়েছেন। রাজ্যে খুচরো ব্যবসায়ীরাই বাংলার অর্থনীতির মেরুদণ্ড।” একই সঙ্গে বাংলা যে ব্যবসা ও বাণিজ্যের জন্য সম্পূর্ণ উপযুক্ত রাজ্য, সে বার্তাও বারবার দেন তিনি।
বক্তৃতার একাংশে কেন্দ্রের নোটবন্দি সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে গত কয়েক বছরে রাজ্যের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, এক সময় রাজ্যে বেকারত্বের হার ৪০ শতাংশে পৌঁছেছিল, যা এখন অনেকটাই কমানো সম্ভব হয়েছে। তিনি জানান, রাজ্যে ৬টি ইকোনমিক করিডর তৈরি হচ্ছে, যার চারপাশে শিল্প, দোকান ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র গড়ে উঠবে। এতে খুচরো ব্যবসায়ীরা সরাসরি লাভবান হবেন। পাশাপাশি লজিস্টিককে শিল্পের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে এবং কলকাতা ও শিলিগুড়িতে এক্সপোর্ট সেন্টার চালু করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের স্বার্থে এদিন একটি নতুন পোর্টালও চালু করেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি কাজ সম্পন্ন করার পর যাতে ব্যবসায়ীদের টাকা পেতে কোনও সমস্যা না হয়, সে জন্যই এই উদ্যোগ। মুখ্যমন্ত্রী জানান, কাজ শেষ হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট তথ্য ওই পোর্টালে আপলোড করতে হবে। তারপর পোর্টালের সঙ্গে যুক্ত ৭২টি ব্যাঙ্ক ও আর্থিক সংস্থা দ্রুত অর্থ মেটাবে। পাশাপাশি এই পোর্টালের মাধ্যমেই ব্যবসায়ীরা অভিযোগ জানাতে পারবেন, যার ভিত্তিতে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
সব মিলিয়ে নেতাজি ইন্ডোরের মঞ্চ থেকে রাজ্যের উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের সাফল্য তুলে ধরে বিরোধীদের সমালোচনার পালটা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী দিনে রাজ্যের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে বলেই আশাবাদী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।